ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩ : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে মধ্যরাতে নবীন ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
Advertisement
শনিবার (১৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ।
প্রক্টর বলেন, ‘সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে অভিযুক্তদের বহিষ্কারে সবাই একমত পোষণ করেন। এ প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ পার্ট-২ এর ধারা ৮ অনুযায়ী অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছরের জন্য ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে।’
বহিষ্কৃতরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ও ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ সভাপতি সানজিদা চৌধুরি অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম ও চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মি। অন্তরা বাদে সকলেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
এদিকে অভিযুক্তদের শাস্তির বিষয়ে নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুন বলেন, “তারা আমার উপর যে ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে তাতে এক বছরের শাস্তি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এই সিদ্ধান্তে আমি সন্তুষ্ট না বরং আরো আতঙ্কিত। কারণ তারা এক বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে প্রতিশোধ নিবে না তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? আমি মনে করি, আমি সঠিক বিচার পাইনি। আমি চাই তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হোক।”
বহিষ্কৃত ছাত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আমার আস্থা ছিলো না। আমি অভিযোগ করেছিলাম তার কোনো সমাধান বিশ্ববিদ্যালয় করেনি। আমি ন্যায়বিচার পাইনি।”
Advertisement
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন চ্যানেল-২৪ কে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর পার্ট-২, ধারা ৮ অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শাস্তির কপি অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হবে। এছাড়াও আমাদের সিদ্ধান্ত আদালতে প্রেরণ করা হবে। পরবর্তী করণীয় তখন নির্ধারিত হবে।’
এর আগে গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তাঁকে নির্যাতন করেন বলে জানায় ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হলে হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।
এ ঘটনায় গত ৪ঠা মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শৃঙখলা কমিটির সভায় অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছিল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও তাদের সকলকে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
Advertisement
এরপর গত ১২ই জুন অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটি। একইদিনে ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুনকেও ডাকা হয়। এসব বিবেচনা শেষে শনিবার ঘটনা নিয়ে ছাত্র-শৃঙখলা কমিটির চূড়ান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।