ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ : এ যেন রিজেন্টের প্রতারক সাহেদকেও হার মানায়। টকশোতে অংশগ্রহণ কিংবা মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে ছবি তোলা তার কাছে মামুলি। গাজীপুরের প্রয়াত এমপি রহমত আলীর সন্তান বলে পরিচয় দিয়ে মন্ত্রীদেরও ফাঁদে ফেলতেন তিনি। ফেসবুকে প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী পরিচয় দিয়ে বহু মেয়েকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছেন ফেসবুকে মাসুম বিল্লাহ হিসেবে পরিচয় দেওয়া রাজু। ভুক্তভোগী এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দারা।
Advertisement
গরিব-দুঃখীর জন্য কষ্টের সীমা নেই তার, কথার মধ্যে যেন দাতা হাতেম তাইয়ের ভাব। ফেসবুক প্রোফাইল দেখলে তো ‘স্যার’ ছাড়া তাকে ডাকতেই ইতস্তত বোধ করবেন বেশির ভাগ মানুষ। শুনতে হাস্যকর লাগলেও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রায় ৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমডি কিংবা কর্ণধার তিনি। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ সেজেছেন সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তবে বিপিএল শেষ না হতেই রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে এ কেমন হাল তার। গোয়েন্দারা বলছে, ফেসবুকে প্রায় চার লাখ ফলোয়ার থাকায় নানান পরিচয়ে মেয়েদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলতেন রাজু ওরফে মাসুম বিল্লাহ। কখনও তিনি মার্কিন নাগরিক, কখনও তার পরিচয় মন্ত্রী কিংবা এমপির সন্তান। তবে বেশির ভাগ সময় নিজেকে গাজীপুরের প্রয়াত এমপি রহমত আলীর সন্তান বলেই পরিচয় দিতেন। আর এ পরিচয় ব্যবহার করে মন্ত্রীদেরও ফেলেছেন প্রতারণার ফাঁদে।
Advertisement
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন আর রশিদ বলেন, ফেসবুক আইডিতে সে যতগুলো পরিচয় উল্লেখ করেছেন সবগুলো ভুয়া। সে নীলক্ষেত থেকে গ্রিন কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়েছে, এমনকি ভোটার আইডি কার্ডও নীলক্ষেত থেকে বানিয়েছে। সে বলেছে, তারা বাবা সাবেক মন্ত্রী রহমত আলী এমপি, এটিও ভোগাস। এ কথা বলার কারণে এতে মন্ত্রীদের আঙ্কেল ডাকে এবং বিভ্রান্ত করে।
তার প্রতারণার সবচেয়ে বড় শিকার নারীরা। মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে যে কারও সঙ্গে বন্ধুত্বের পর বিলাসী জীবন প্রদর্শন করতেন তিনি। বিমানে ঘুরতে নিয়ে যেতেন বিভিন্ন জায়গায়।
গোয়েন্দারা বলছে, এমনভাবে অর্ধশতাধিক নারীর কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
তবে কোনোকিছু না হারিয়েও সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী এই মা। নিঃসন্তান এই নারী দত্তক নিয়েছিলেন রাজুকে। তবে শৈশব থেকেই বিভিন্ন জনের কাছে ধার-দেনা ও বাটপারি করতে থাকায় ১২ বছর বয়সে বাসা থেকে বিতাড়িত হয় সে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রাজুকে বের করে দেওয়ার কিছুদিন পর মারা যান এই নারীর স্বামী।
চোখের পানি মুছতে মুছতে ভুক্তভোগী এই মা বলেন, ও যে এসব করবে এবং আমাকে এই পর্যন্ত আসতে হবে। এটা আগে ভাবতে পারি নাই। আমরাও তো আত্মীয়-স্বজন আছে।
গোয়েন্দারা আরও বলেছেন, রাজুকে রিমান্ডে নিয়ে তার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, সেটি তদন্ত করা হবে।