গ্রেপ্তার ওয়াহিদুল আলম ফকির
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ময়মনসিংহের নান্দাইল প্রতিনিধি, বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২ : ময়মনসিংহের নান্দাইলে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল দলের এক নারী ফুটবলারকে (১৭) ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে গাজীপুর জেলার গাছা থানার ছয়দানা হাজীপুকুর পাড়ে অবস্থিত একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ময়মনসিংহের নান্দাইল মডেল থানা-পুলিশের একটি দল।
গ্রেপ্তার ছাত্রলীগের নেতার নাম ওয়াহিদুল আলম ফকির ওরফে ফয়সাল। তিনি নান্দাইল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফয়সাল পৌর শহরের পাছপাড়া গ্রামের লাল মিয়া ফকিরের ছেলে।
ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা-মা বলেন, আমাদের মেয়ে ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করে। বড় হয়ে দেশ বিদেশে খেলে অনেক মেডেল পেয়েছে। আমারা মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। কিন্তু হঠাৎ করে ফয়সাল নেতা আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ করেছে। পুলিশের কাছে গেলাম বিচারের আশায়। এখন দেখার অপেক্ষায় পুলিশ কি করে।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, ওই কিশোরী অভিযোগ দিলে শনিবার ধর্ষণ চেষ্টার মামলা নেয়া হয় ফয়সালসহ অজ্ঞাত দুইজনকে আসামি করে। আজকে বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ফয়সালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভিকটিমের বক্তব্য শুনেই ধর্ষণ চেষ্টার মামলা নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, নিয়ম হচ্ছে ভিকটিমের বক্তব্য অনুযায়ী মামলা নেয়া। সেক্ষেত্রে যদি পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২২ এপ্রিল) উপবৃত্তির ফাইলে স্বাক্ষর দেয়ার কথা বলে ওই কিশোরী ফুটবলারকে কলেজে ডেকে নেয় ফয়সাল। পরে তাকে প্রশাসনিক ভবনের পেছনে নিয়ে মুখ চেপে গলায় চাকু ধরে ধর্ষণচেষ্টা ও ভিডিও ধারণ করে ফয়সাল। এতে তাকে সহযোগিতা করে আলামিন ও অজ্ঞাত আরও এক সহযোগী। ঘটনা কাউকে বললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়াসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে পরিবারটি।
ভিকটিম কিশোরী বলেন, বিভিন্ন স্থানে খেলতে গিয়ে ফয়সালের সঙ্গে পরিচয় হয়। তবে কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই। কলেজে যাওয়ার আসার সময় খোঁজ খবর নিতো। সে বিবাহিত তার একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।
কিশোরী আরও জানায়, বাবা মুদির দোকান করে। পরিবারের সাত সদস্যের সংসার। ফয়সাল ওইদিন শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কল করে বলে উপবৃত্তির জন্য স্বাক্ষর লাগবে। স্বাক্ষর না দিলে উপবৃত্তি আর পাব না। তাই কল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মাকে বলে কলেজে আসি। কলেজে ঢুকে ফয়সালকে কল দেই পরে সে প্রশাসনিক ভবনের পেছনে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে বলি লোক কোথায় ফয়সাল বলে খেতে গেছে। সেই কথা বলেই মুখ চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দিয়ে ঝাপটে ধরে। আমি চিৎকার করা শুরু করলে ফয়সাল আমাকে চাকু মেরে দেয়ার হুমকি দেয়। মাটিতে ফেলে দেয়ার সময় আলামিন আমার পা ধরে রাখে। ভিডিও করে অজ্ঞাত আরেক ছেলে। প্রতি সপ্তাহে ফয়সাল তার সঙ্গে সময় কাটাতে বলে। অন্যথায় ভিডিও ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি হত্যার হুমকি দেয়। বিষয়টি কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম দেখলেও সহযোগিতা করেনি। এরপর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি মা-বাবাকে বলি।
ভুক্তভোগী জানায়, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা বেগম ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে খেলা শুরু হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টে ময়মনসিংহ বিভাগের হয়ে খেলি ও আমার দল রানার্সআপ হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমাদের নগদ অর্থ ও রুপার মেডেল তুলে দেন ক্রীড়া উপমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল। বর্তমানে অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল টিমের একজন সদস্য। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (ফুটবল) উত্তরা আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাব ও ময়মনসিংহের কালিঝুলি স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলে মেডেল ও সনদ অর্জন করি।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরী বলেন, আমার স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে খেলে দেশের জন্য জয় ছিনিয়ে আনা। এই অবস্থায় আমি খুবই আতঙ্কিত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি বাঁচতে চাই।
কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম বলেন, মেয়েটা কলেজে ঢুকার পর ফয়সাল থাকে জড়িয়ে ধরলে মেয়েটি চিৎকার করে। চিৎকার শুনে আমি কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ফয়সাল আমাকে চাকু দেখালে আমি বাহিরে বের হয়ে মোবাইলে টাকা রিচার্জ করে অধ্যক্ষ স্যারকে কল দেই। পরে অধ্যক্ষ স্যার তাদেরকে বাহিরে বের করে দিতে বলে।