ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,রোববার, ২৪ এপ্রিল ২০২২ : ইদানীং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার নানা খবর বারবার উঠে আসছে শিরোনামে। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের পরোক্ষ মদদেই চলছে নিপীড়ন। তবে ভারতবর্ষের ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনেক উদাহরণই পাওয়া যায়।
ফের তৈরি হলো তেমনই এক উদাহরণ। তাও আবার কর্ণাটকের মাইসরুতে। অথচ এই কর্ণাটকেই সম্প্রতি কতিপয় উগ্রপন্থী হিন্দুদের রোষানলের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় মুসলিমরা।
মুসলিম এবং হিন্দুদের সহাবস্থান যে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং মানুষের মনে ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ যে নেই তার প্রমাণ মিলল এদিন। এক হিন্দু নারীর মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য করার জন্য কাউকেই পাচ্ছিল না পরিবার। তখনই এগিয়ে আসেন মুসলিম প্রতিবেশীরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবর অনুযায়ী, ঘটনা চলতি রমজানের গত শুক্রবারের। প্রতিবেশি এক ৬০ বছরের নারীর মৃত্যুর পর শেষকৃত্যের জন্য কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তার স্বামী ও ছেলে। আত্মীয় স্বজনও তেমন কেউ আসেনি।
নিজেদের লোকই মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় ওই নারীর শেষকৃত্য করা নিয়ে বিপাকে পড়েন তার স্বামী ও ছেলে। আর তা বুঝতে পেরে রোজা রেখেই এগিয়ে আসেন ৫০ থেকে ৬০ জন মুসলিম প্রতিবেশী। তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবেশী ওই বউদির শেষকৃত্য সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন।
তানভীর পাশা নামে এক সমাজসেবী দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘জায়াক্কা দেবী তার জীবনের বেশিরভাগ সময় এই এলাকায়ই কাটিয়েছেন। এখানে তারাই ছিলেন একমাত্র হিন্দু পরিবার। আর আমরা সকলেই মিলেমিশে দুর্দান্ত এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন উৎসব ও পারিবারিক অনুষ্ঠান আমরা একসঙ্গে পালন করতাম। যখন আমরা তার হঠাৎ মৃত্যুর খবর শুনলাম তখন আমরা সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আর তাই আমরা সবাই মিলে তার জন্য আমাদের কাঁধ ধার দিয়ে তাকে সম্মানজনক বিদায় দিতে চেয়েছি। এই দুঃসময়ে তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি।
মুসলিম প্রতিবেশীরা, যারা রমজান পালন করছিলেন তারা তার শেষ যাত্রায় অংশ নেন বলে উল্লেখ করা হয় হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি হিজাব বিতর্ক, হালাল পণ্য বিক্রি বন্ধ, মাংস বিক্রেতাদের ওপর হামলাসহ নানান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয় কর্ণাটকে। তবে এসবে টলেনি হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য। জায়াক্কা দেবীর মৃত্যুতে ফের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখা গেল মুসলিম ও হিন্দুদের।