তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, বৃহস্পতিবার কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পরে আরও বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
‘যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে ভবন নির্মাণাধীন থাকায় শ্রমিকদের অবাধ আনাগোনা থাকায় লোকজনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি’ বলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি মনে করে। ‘এছাড়া ছাত্রাবাস এলাকায় কলেজের অনেক কর্মচারী সপরিবার থাকেন।’
‘মহামারি পরিস্থিতিতে নজরদারির ঘাটতি ছিল। এখন নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার।’
‘হোস্টেল বন্ধ থাকলেও যে কোনো জায়গায় যে কেউ ঢুকতে পারে। কোথাও কোথাও সীমানা প্রচীর নেই। কোথাও কোথাও সীমানা প্রচীর থাকলেও অনেক নিচু। কোথাও তারকাটা দেয়া থাকলেও তা কাটা। যে কারণে ছাত্রাবাস খোলা থাকুক বা না থাকুক যে কেউ ভেতরে ঢুকতে পারে।’
ধর্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলেও তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। ‘তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে রাজনৈতিক ও সামাজিক কঠোর অবস্থান নিতে হবে।’ তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার বলেও মনে করে। ‘পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করে স্থায়ী একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে।’
‘ঘটনাটি ছাত্রাবাসের কোনো কক্ষে নয়, ধর্ষিতা ও তার স্বামীর গাড়িতে ঘটেছে’ বলেও তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না বলেও মনে করে তদন্ত কমিটি। ‘যেহেতু কলেজ ক্যাম্পাসে অপকর্মটি ঘটেছে, তাই তার দায় কলেজ কর্তৃপক্ষের রয়েছে। তবে কমিটি যেই সীমাবদ্ধতা দেখেছে তাতে কারো পক্ষেই এ ধরনের ঘটনা রোধ করা কঠিন।’ তদন্ত কমিটির এক সদস্য এমন মন্তব্য করেন।
সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেনি। তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। যে দারোয়ান দায়িত্বে ছিল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদেরকেও কলেজ কর্তৃপক্ষ জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এসেছে।’
তদন্ত কমিটি নির্যাতিতা নারীর সঙ্গে কথা বলেনি বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।
‘মেয়েটির সঙ্গে আমরা কথা বলিনি। যেহেতু তিনি মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। আমরা তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছি।’
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা সচিবের কাছে জমা দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে প্রকাশ করা হবে কি হবে না।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রাইভেটকারে কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে গেলে এক নবদম্পতিকে জোর করে ছাত্রাবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বামীকে ব্যাপক মারধর করার পাশাপাশি বেঁধে রেখে গৃহবধূকে গাড়িতে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। খবর পেয়ে রাত ১১টায় শাহপরাণ থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। বর্তমানে ওই তরুণী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় ছয়জনকে। সে সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৬ আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তারা হলেন- শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম, আইনুল ও রাজন।