ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,১০ আগষ্ট : কক্সবাজারের টেকনাফে যে চেকপোস্টে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলির ঘটনা ঘটেছিল তা বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চেকপোস্ট ছিল না। সেটি ছিল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-১৬ এর চেকপোস্ট। পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী সেই চেকপোস্টে গিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে সিনহা’র গাড়ি থামিয়েছিলেন এবং পরে গুলি করেছিলেন।
রোববার কক্সবাজার এপিবিএন-১৬ এর অধিনায়ক হেমায়েতুল ইসলাম ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)কে বলেন, যে চেকপোস্টে ঘটনা ঘটেছিল তা এপিবিএনের। লিয়াকত আলী আমাদের লোকজনকে ফোন করে বলেছিলেন একটি গাড়ি আসবে তা যেন থামানো হয়। আমাদের লোকজন ওই রঙয়ের গাড়ি সিগন্যাল দিলেও সেটি প্রথমে থামেনি। ততক্ষণে লিয়াকত আলী চেকপোস্টে চলে আসেন। তিনি একটু সামনে গিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়িটি থামান। অপরাধ নিয়ে তারা কাজ করেন। আমরা শুধু রাস্তায় গাড়ি চেক করি। সন্দেহজনক থাকলেও সেটা আমাদের কাছে আসার কথা নয়।
তবে সিনহা নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজহারে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন রাত ৯টা ১৫ মিনিটে শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে অবস্থান নিয়ে যানবাহন তল্লাশি করতে থাকেন এসআই শাহজাহান, কনস্টেবল রাজীব ও আব্দুল্লাহ। চেকপোস্টে পুলিশ প্রাইভেটকার থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে সংকেত না মেনে অতিক্রম করার চেষ্টা করেন। গাড়ির চালকের আসনে বসা এক ব্যক্তি তর্ক শুরু করেন। তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে প্রাইভেটকারের ড্রাইভিং সিটে বসা ব্যক্তি নেমে নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দেন। এরপর তাকে হাত উচুঁ করে দাঁড়াতে বলেন ও তার বিস্তারিত পরিচয় জানতে চান। ওই ব্যক্তি কিছু সময় তর্ক করে তার কোমরের ডান পাশ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হলে পরিদর্শক লিয়াকত আলী নিজের ও সঙ্গীয় ফোর্সদের জানমাল রক্ষার্থে গুলি চালায়। এতে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ দিকে সিনহা নিহতের ঘটনা কেন্দ্র করে আরও যে তিনটি মামলা হয়েছে তার তদন্তভার র্যাবের কাছে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এসব মামলার তদন্ত র্যাবের কাছে দিতে আবেদন করা হয়েছে। সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার পর কক্সবাজার পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সিনহা রাশেদ তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। তবে পুলিশের এমন ভাষ্য নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তার এক সঙ্গীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের ভাষ্যের কিছুটা অমিল রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সিনহা নিহতের ঘটনায় তার বোন বাদী হয়ে কক্সবাজার আদালতে যে মামলা করেন তাতে মোট ৯ জনকে আসামি করা হয়েছিল। ওই মামলায় বৃহস্পতিবার ওসি প্রদীপসহ সাতজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।