বাংলাদেশি-পাকিস্তানির ভালোবাসার কাছে হার মানল করোনা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,জয়পুরহাট প্রতিনিধি,২২ মে : সারা বিশ্বকে ওলট পালট করতে পারলেও বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি তরুণ-তরুণীর ভালবাসার কাছে হার মেনেছে করোনাভাইরাস।

সম্প্রতি ওই দুই দেশের প্রেমিক যুগলের অনলাইনে বিয়ে সম্পন্ন হবার মধ্য দিয়ে সেই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

কনে বাংলাদেশি, তার বাড়ি জয়পুরহাট জেলায়। অন্যদিকে বরের বাড়ি পাকিস্থানের পাঞ্জাব প্রদেশে।

বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিকেল ৫টায় জয়পুরহাট পৌর শহরের কাশিয়াবাড়ি এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কনের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান।

কনের পারিবারিক সূত্র জানায়, মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে মুরসালিন সাবরিনা আমেরিকান অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অফ দ্য পিপল’ এ লিখাপড়া করছেন ২০১৮ সাল থেকে। সেখানে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন সাবরিনা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা অবস্থায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ইয়েমার এর মাধ্যমে পরিচয় ঘটে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শাহরুখনে আলম কলোনীর যুবক মুহাম্মদ উমের এর সঙ্গে। উমের এর বাবা বিলাল আহম্মেদ বড় ধরণের সব্জি ও ফল ব্যবসায়ী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইনে তাদের পরিচয়। সেই পরিচয় এক সময় শুভ পরিনয়ে রূপ নেয়। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। ২০১৯ সালে তাদের এই প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হয় উভয় পক্ষের অভিভাবকদের মাঝে।

এরপর, উভয় পরিবারের অভিভাবকরা তাদের বিবাহ সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক উমের এবং তার পরিবার বাংলাদেশে আসার জন্য ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভিসার জন্য আবেদন করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জয়পুরহাটে সাবরিনা এবং তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেয় স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ভিসা নিয়ে মার্চ মাসেই উমের এর পরিবার বাংলাদেশে এসে বিয়ে সম্পন্ন করার কথা ছিল।

কিন্তু বাধ সাধে করোনা ভাইরাস। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থগিত হয়ে যায় তাদের ভালবাসার বিয়ে। বিয়ে স্থগিত হলেও সাবরিনা এবং উমের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইনে তাদের প্রেমের সম্পর্ক অব্যাহত রাখে।

তাদের প্রেমের এই সম্পর্ক উভয় পরিবার মেনে নিলেও মুসলিম শরিয়ত মতে অবৈধ হওয়ায় আপত্তি তোলেন উমের এর বাবা বিলাল আহম্মেদ। তিনি তাদের যোগাযোগের বৈধতা দিতে সাবরিনার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইনে বিয়ে সম্পন্নের প্রস্তাব করেন।

বিষয়টি মেনে নিয়ে উভয় পরিবার বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় অনলাইনে তাদের বিয়ে সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী ওইদিন বিকেল ৫টায় সাবরিনার বাড়িতে স্বজন ও স্থানীয় প্রতিবেশিদের নিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বিয়ের আয়োজন করা হয়।

অনলাইনে তাদের বিয়ে পড়ান মওলানা মোস্তাফিুজর রহমান। এ সময় অনলাইনে সাবরিনার কবুল পড়া শোনানো হয় বর উমের এবং তার বাবা বিলাল অহম্মেদকে। একইভাবে অনলাইনে উমেরও তার প্রেমিক মুরসালিন সাবরিনাকে স্ত্রী হিসেবে কবুল করে নেন।

মুরসালিন সাবরিনার বাবা ব্যাংক কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেন জানান, মেয়ের সঙ্গে পাকিস্তানি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক প্রথমে তিনি মেনে নিতে চাননি। কিন্তু পরে তাদের খোঁজ খবর নিয়ে খুব ভাল লেগেছে। তাদের পরিবার খুবই ভাল। তাই মেয়ের বিয়ে দিতে সম্মত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই বিয়ে সম্পন্ন করেন।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই মেয়ে জামাই এবং তার পরিবার দেশে এসে অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মেয়েকে নিয়ে যাবেন। তিনি মেয়ে-জামাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।