ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,মোঃ ইসমাইল হোসেন,২২ মে : একটা গরু অনেক আগে থেকেই ছিল। কয়েক মাস আগে জমানো কিছু টাকা দিয়ে আরও একটি গরু কিনেছেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় কামরুল। তিনি পেশায় একজন গাছ ব্যবসায়ী। গ্রামে গ্রামে ঘুরে গাছ কিনে কেটে তা বিক্রি করেন। এর থেকেই সামান্য যা আয় হয় তাতেই সংসার চলে কামরুলের।
করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর গাছ কেনা-বেচা বন্ধ থাকায় বাড়ির বাইরে বের হওয়া হয় না তার। তাই সারাদিন সংসারের টুকটাক কাজের পাশাপাশি গরু দুটির যত্ন নিতেই বেশি সময় কাটে তার। আর গত দুই মাসে তাদের প্রতি আরও বেশি মায়া হয়ে গেছে তার।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আসার খবরে বেশ চিন্তায় পড়েন কামরুল। ধরেই নিয়েছিলেন খুঁটির জোর না থাকা নিজের ঘরটি হয়তো পড়ে যাবে । সেইসঙ্গে গোয়াল ঘরও হয়তো ঝড়ে ভেঙে পড়বে। কিন্তু কি করবেন, না করবেন এমন চিন্তায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন- যাই হোক অন্তত বড় দুটো রক্ষার চেষ্টা তিনি করবেন।
ঝড় শুরু হলে পরিবারের অন্যরা নিরাপদ আশ্রয়ে গেলেও গরুর মায়ায় ঘর ছাড়েননি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কামরুল।
কথা হলে কামরুল জানান, ঝড়ের গতি বাড়তে দেখে আটটার দিকে বাবা, স্ত্রী ও মেয়েকে পাশে এক প্রতিবেশীর ঘরে যেতে বলেন। তারা সেখানে চলে যায়। কিন্তু কামরুল আর যাননি। তিনি ঘরের সামনে খোলা বারান্দায় (চালা আছে বেড়া নেই) গিয়ে বসেন। ঘরের সামনে উত্তর পাশে গোয়ালঘর।
এভাবে গোয়ালের দিকে তাকিয়েই সারাটা রাত কেটেছে কামরুলের। যখনই একটু বাতাসের গতি বেড়েছে তখনই যেন তার বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠেছে। মনে হয়েছে এ বুঝি গোয়ালঘর টা পড়ে গেল। তিনিও প্রস্তুত রয়েছেন, ঘর পড়লেই দৌড়ে গিয়ে যেভাবে হোক গরু দুটিকে বের করে দেবেন। তার আগে তিনি গরুর দড়িও ছেড়ে রেখেছিলেন।
রাত ১২টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজে একবার গরু ঘরে গিয়ে চারপাশ থেকে নেট দিয়ে আসেন, যাতে অন্তত বৃষ্টিটা একটু গরুর গায়ে কম যায়। একটু জোরে বাতাসের গতি বেশি বুঝলেই টর্চ লাইট জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে দেখেছেন সব ঠিক আছে কি না।
রাত আড়াইটার পরে বাতাসের গতি একটু কমতে থাকে এসময় তিনি একটু নিশ্চিন্ত হন, হয়তো এ যাত্রায় ঘর বা গোয়াল ঘরটা বেঁচে গেল। তারপরও মন মানে না । তিনি ঘুমোতে যাননি । অপেক্ষা করেছেন আরও ঘণ্টা দেড়েক। ভোর চারটার দিকে তার চোখে একটু ঘুম আসে এবং ওখানেই বারান্দার কোণে রাখা চৌকিতে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেন। ঘুম ভেঙে সকালে উঠে দেখেন সব ঠিক আছে, সব স্বাভাবিক। সকালে তার মনে হচ্ছিল যেন দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন।