ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১১ মে : বিশ্ব মা দিবসেও ছেলের ভয়ে ঘরবন্দি এক মা। ছেলের মারধরে আহত ওই মা নিজের জীবন বাঁচাতে কলাবাগান থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলাও করেছেন। তবে ছেলেকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।নাম নুরুন্নাহার রুনু (৫১)। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। স্বামী কয়েকবছর আগে মারা গেছেন। দুই সন্তানের জননী নুরুন্নাহার রুনু। মেয়ে লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি করলেও ছেলে লেখাপড়া করেনি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ছেলে মিল্লাত হোসেন (২৫) জড়িয়ে পড়েছে অপরাধ জগতে।
রাজধানীর কলাবাগান থানার গ্রিনরোড এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের নামে বরাদ্ধকৃত একটি সরকারি ডরমেটরিতে ছেলেকে নিয়ে থাকেন নুরুন্নাহার রুনু (৫১)। ছেলে মাদকের টাকার জন্য প্রায়ই মাকে মারধর ও ঘরে ভাঙচুর করে।গত ৭ মে মধ্য রাতে মা নুরুন্নাহার রুনুকে মারধরের করে মিল্লাত। পরদিন দুপুরে কলাবাগান থানায় ছেলের নামে মামলা করেন মা। তিনি মামলায় অভিযোগ করেন, মিল্লাত অষ্টম শ্রেণির পর থেকে লেখাপড়ে ছেড়ে দেয়। সে বখে যায়। পাড়ার বিভিন্ন ছেলেদের সঙ্গে মিশে মাদক সেবন করে। সে মাদকের টাকার জন্য প্রায়ই ঘরে ভাঙচুর ও আমাকে মারধর করে। তাকে ভালো করার জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে। রিহ্যাবে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে ভালো করা যায়নি।তিনি মামলায় অভিযোগ করেন, ৭ মে মধ্যরাতে মাদক কেনার টাকার জন্য সে প্রথমে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর আমাকে কাঠের একটি লাঠি দিয়ে মারধর করে। আমি মাথায় এবং কানে আঘাত পাই। আমি মেঝেতে পরে গেলে আমাকে লাথি মেরে ঘর থেকে জিনিসপত্র ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ভবিষ্যতে মাদকের টাকা না পেলে সে আমাকে আবার জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গেছে।নুরুন্নাহার রুনু বলেন, ৭/৮ বছর ধরে মিল্লাত খারাপ লাইনে চলে গেছে। ওর বাবা ২০১৭ সালে মারা যাওয়া পর সে আরও বেশি খারাপ হয়েছে। আগে কেবল গালিগালাজ করতো। বর্তমানে প্রায়ই মারধর করে। আমি এতোদিন হজম করেছি। কিন্তু গত ৭ মে রাতে আমি ভাবছি আমাকে খুন করে ফেলবে। আমাকে দুই ঘন্টা খাটের শুয়ে জিম্মি করে রাখে আর পিটাতে থাকে। আমাকে বাথরুমেও যেতে দেয়নি। রাতে পৌনে ১ টার দিকে যখন পাশের ফ্ল্যাটের লাইট বন্ধ করে, তখন আমাকে বাথরুমে যেতে দেয়। এরপর আমি বাথরুম থেকে বের হয়ে দৌড়ে নীচে যাই। নীচ তলার ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল দেই, তারা অনেকক্ষণ পর দরজা খুলে। আমি তাদের পা হাত ধরে তাদের কাছে আশ্রয় চাই। এরপর তারা আমাকে আশ্রয় দেয়। পুলিশ ডাকে। পুলিশ গিয়ে ওকে বাসা থেকে বের করে দেয়। কিন্তু আমি যখন বাসায় যাই গিয়ে দেখি আমার পেছনে সে আবার এসেছে। আমি এমন ভয় পেয়েছি চিৎকার দেই। তখন অন্য ফ্ল্যাটের লোক এসে ওকে বের করে দেয়।’তিনি বলেন, ‘আমি সেদিন রাতে দোয়া পড়েছি, আর কান্না করেছি, আমি ভাবছি আমাকে মেরেই ফেলবে। আমি মৃত্যুর আগেই আজরাইল দেখেছি। ছেলে তার মাকে এভাবে মারতে পারে তা আমার বিশ্বাস হয় না। আমার কি অপরাধ। আমার কাছে যতক্ষণ টাকা থাক আমি দেই। আমি আর কোথায় টাকা পাবো?তিনি কান্না করে বলেন, এই পৃথিবীতে আমার এক ছেলে ও একমেয়ে ছাড়া কেউ নেই। সম্পত্তি নাই, টাকা নাই। কিন্তু আমার সেই ছেলেই আমাকে খুন করতে চায়!এ বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র বলেন, আমরা একাধিকবার অভিযান চালিয়েছি, কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।