ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,গাজীপুর প্রতিনিধি,১২ মার্চ : গাজীপুরে এক কিশোরী বধূ যৌতুকের বলি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা থানার কুনিয়া পাছর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কিশোরী বধূ হাজেরা বেগম (১৭) জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার আগ্রাখালী গ্রামের আব্দুল হাকিমের মেয়ে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুল হাকিম বাদী হয়ে বুধবার হাজেরার স্বামী, ভাশুর ও শ্বশুরকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ নিহতের স্বামী মো. মামুন আকন্দ (২৩) ও শ্বশুর রমজান আলীকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার এনায়েতপুর গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, আড়াই বছর আগে পারিবারিকভাবে মামুনের সঙ্গে কিশোরী হাজেরার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভাই ও বাবার পরামর্শে মামুন তিন লাখ টাকা যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। বহু কষ্টে তিন মাস আগে বাবা আবদুল হাকিম জামাতা মামুনকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দেন। ওই টাকা খরচ করে আবারও তিন লাখ টাকার জন্য অন্তঃসত্ত্বা হাজেরার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকেন। এরই মধ্যে এক সপ্তাহ আগে হাজের একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।
সন্তান জন্মের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন হাজেরা। খবর পেয়ে মা মছিরন বেগম গত ৭ মার্চ মেয়েকে দেখতে আসেন। অসুস্থ মেয়েকে তিনি বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে মামুন যৌতুকের তিন লাখ টাকা না দিলে হাজেরাকে দেওয়া হবে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
মঙ্গলবার সকালে বাবা আবদুল হাকিম মেয়েকে দেখতে এলে যৌতুকের টাকা ছাড়া তাঁকেও দেখতে দেওয়া হবে না জানিয়ে তাড়িয়ে দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় গুরুতর অবস্থায় মেয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে শুনে তিনি স্থানীয় এক ডাক্তারকে খবর দেন। ডাক্তার এসে হাজেরাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মামুন ও তাঁর বাবা রমজান আলীকে আটক রেখে পুলিশে খবর দেন।
মেট্রো পলিটন গাছা থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন জানান, মেয়েটির বাবা খুবই গরিব। মেয়ের নির্যাতন সইতে না পেরে বহু কষ্টে ধারদেনা করে মামুনকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা যৌতুক দিয়েছিলেন। এতে তাঁর মন ভরেনি। আরো টাকার জন্য নির্যাতন শুরু করেন। মেয়েটি অপুষ্টিতে ভুগছিল। ১১ দিন আগে বাড়িতে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মেয়েটি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় মামুন ও তাঁর পরিবারের মারাত্মক অবহেলার প্রমাণ রয়েছে। গ্রেপ্তার স্বামী ও শ্বশুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে বুধবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।