ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,১৬ ফেব্রুয়ারি : দুপুরের খাওয়া সবে শেষ হয়েছে। বাসনকোসন রান্নাঘরে রেখে সদর দরজা বন্ধ করতে এসেছিলেন গীতা। কিন্তু বাইরের ঘরে কে বসে? কাকা না? ভয়ে চিৎকার করে ওঠেন গীতা। তার চিৎকারে ঘাবড়ে যান ভূষণ পাল।
এরপর বলে উঠেন, ভাত দে ক্ষুধা পেয়েছে। শুনে গীতার হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার উপক্রম।
হাতে খুন্তি নিয়ে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেন গীতা পাল। প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাদেরও পা কাঁপছে দৃশ্য দেখে। মাসখানেক আগে যে লোকের শ্রাদ্ধ হয়ে গেল, সেই লোকই জ্যান্ত হাজির।
শুক্রবার দুপুরে ভারতের নৈহাটির সাহেব কলোনি মোড় এলাকায় এমন কাণ্ড ঘটে।
হইচই থামার পড় বোঝা গেল, যিনি বাড়ি ফিরেছেন, তিনি ভূত নন। ভূষণ পাল (৭৪)। ক’দিন আগেই তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, ভূষণ থাকতেন ভাতিজি গীতা এবং ভাতিজা প্রদীপ পালের বাড়িতে। মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন বৃদ্ধ। মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিন কয়েক পর ফিরে আসেন। মাকে নিয়ে ভূষণের ছেলে ভাস্কর থাকেন মেদিনীপুরে।
১০ নভেম্বর নৈহাটির বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ভূষণ। বেশ কয়েক দিন কেটে গেলেও খোঁজ মেলেনি। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে পরিবার।
৭ জানুয়ারি পুলিশ খবর দেয়, অজ্ঞাতপরিচয় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।
প্রদীপ-ভাস্কররা দুদিন পর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখেন, শীর্ণকায় মৃতদেহ। মুখ দেখে পরিচয় বোঝার উপায় নেই। শেষমেশ ডান পায়ের আঙুল দেখে লাশ চিনতে পারা গেছে বলে দাবি করেন তারা। একটি আঙুল অন্য আঙুলের উপরে খানিকটা ওঠা।
সৎকারের পর নিয়মমাফিক শ্রাদ্ধশান্তি হয়। তারপরেই শুক্রবার দুপুরের ঘটনা।
গীতা বলেন, ‘আমি দুপুরে রান্না করছিলাম। হঠাৎ জানলার সামনে দেখি, কাকা দাঁড়িয়ে। ভাত চাইল। দেখে আমার তো হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। পরে বুঝলাম ব্যাপারটা আসলে কী!’
প্রতিবেশী সুমিত দাস বলেন, ‘ক’দিন আগে যার শ্রাদ্ধ খেয়ে এলাম, সেই লোকটাই
সশরীরে হাজির, এমন ঘটনা ভাবতেই পারছি না।’
এদিকে ভূষণ পাল আছেন নিজের খেয়ালেই। এত দিন কোথায় ছিলেন প্রশ্ন শুনে খানিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন।
তারপরে বললেন, ‘এই একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম।’
আপনার শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে জানেন কী না জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলেন, ‘তাই নাকি, কই আমাকে তো নিমন্ত্রণ করেনি!’ সূত্র: কলকাতা