‘শীর্ষ ব্যক্তিদের বাসভবনে হামলার পরিকল্পনা ছিল সাব্বিরের’

SHARE

jওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,০১ নভেম্বর :  র‌্যাবের অভিযানে রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম এলাকা থেকে নিহত জঙ্গি আবদুল্লাহর সহযোগী জেএমবি সদস্য এবং বিমান নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বাংলাদেশ বিমানের ফার্স্ট অফিসার পাইলট সাব্বির সহ চার জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিরপুর দারুস সালাম এলাকায় কমল প্রভা নামক বাড়ির পঞ্চম তলায় জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে জঙ্গিদের দ্বারা সৃষ্ট বোমা বিস্ফোরণে জেএমবির সদস্য মীর আকরাবুল করিম ওরফে উপল ওরফে আবদুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই পুত্র সন্তান এবং তার দুই সহযোগীসহ নিহত হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল অনুসন্ধান শুরু করে। গত ২৬ অক্টোবর র‌্যাব-৪ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে জঙ্গি আবদুল্লাহ অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী জেএমবি সদস্য মো. বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিল্লালের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি মতে র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতায় আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়। ওই তথ্যের উপর ভিত্তি করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল গতকাল সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার বেলা ১১ টা পর্যন্ত মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিহত জঙ্গি আবদুল্লাহ সহযোগী সাব্বির এমাম সাব্বির, মোসা. সুলতানা পারভীন, আসিফুর রহমান আসিফ, মো. আলমকে গ্রেপ্তার করে।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সুলতানা পারভীনের স্বামী হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার বিত্তিপাড়া গ্রামে। সে রাজধানীর দারুস সালাম থানার ২/৩ বি, বর্ধণবাড়ির মালিকের স্ত্রী। নিহত জঙ্গি আবদুল্লাহ তার বাড়িতে ভাড়া থাকত। সুলতানা পারভীন আবদুল্লাহর ভাড়াকৃত ফ্ল্যাটে গিয়ে এবং ছাদে উঠে প্রায় সময়ে জঙ্গি সংগঠনের বিষয়ে আলোচনা করত। সে আবদুল্লাহর বাসায় মানিক ওরফে ফরহাদ ওরফে সারোয়ার জাহানের কাছে বায়াত গ্রহণ করে। এছাড়াও সংগঠনের জন্য বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে সুলতানা পারভীন।

গ্রেপ্তারকৃত মো. আসিফুর রহমান আসিফের বাবার নাম মো. আলমগীর হোসেন, তার গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার সদর থানার ছোট শেখহাটি মাষ্টারবাড়ী গ্রামে। সে গ্রেপ্তারকৃত সুলতানা পারভীনের ভাইয়ের ছেলে। নিহত আবদুল্লাহ সাথে আসিফের ঘনিষ্ঠতা ছিল বিধায়, প্রায় সময়ে সে আবদুল্লাহর বাসায় যাতায়াত করত এবং জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন বিষয়ে তারা আলোচনা করত। সেও মানিক ওরফে ফরহাদ ওরফে সারোয়ার জাহানের কাছে বায়াত গ্রহণ করে। সে বিস্ফোরক তৈরির জন্য আবদুল্লাহর বাসায় বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল সরবরাহ করত। এছাড়াও সে তার বন্ধুর কাছ থেকে একটা ৯ এমএম পিস্তল এনে আবদুল্লাহকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় আবদুল্লাহ পিস্তলটি নেয়নি। সুলতানা পারভীন ওই অস্ত্রটি কেনার জন্য আবদুল্লাহকে টাকা দিতে সম্মত হয়েছিল।

গ্রেপ্তারকৃত মো. আলমের বাবার নাম মঞ্জু মিয়া। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার উজ্জ্বলপুর গ্রামে। সে ঢাকায় দারুস সালাম থানার ভাঙ্গাদেয়ালের ২/১ নম্বর বাসায় বসবাস করত।  সে একজন চা দোকানদার। সে বিভিন্ন সময় সংগঠনের কাজে আবদুল্লাহকে গাড়ি সরবরাহ করত। গত রমজান মাসের আগে গ্রেপ্তারকৃত আলমের মাধ্যমে ট্রাক সংগ্রহ করে বিল্লাল। সেই ট্রাক চালিয়ে তাদের নিকটবর্তী পুলিশি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা করে আবদুল্লাহ। সম্প্রতি ইউরোপে জঙ্গিদের গাড়ি হামলা কৌশলে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রেপ্তারকৃত আলমের সরবরাহকৃত গাড়ি দিয়ে সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা গাড়ি চালানোর অনুশীলন করে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানীর ন্যায় এদেশে তাদের  উদ্দেশ্য ছিল গাড়ি চালানো শিখে বিভিন্ন স্থানে গাড়ি অথবা গাড়ী বোমা হামলা করা।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ”সর্বোপরি সব থেকে সংবেদনশীল ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশ বিমানের ফাস্ট অফিসার গ্রেপ্তারকৃত পাইলট সাব্বিরের জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতা। তার বাবার নাম হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ। সে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমী থেকে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর সে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রিজেন্ট এয়ারওয়েজে চাকরি করে এবং এ সময় স্পেন থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়। ২০১৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সাব্বির বাংলাদেশ বিমানের পাইলট হিসেবে কর্মরত। সে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৩৭ পরিচালনা করে।”

”সর্বশেষ গত ৩০ অক্টোবর ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা (১৯:৫০-২৩:০০) ফ্লাইট পরিচালনা করে সাব্বির। গ্রেপ্তারকৃত সাব্বির তুর্কি থেকেও বিমান চালনার উপর প্রশিক্ষণ নেয়। সে দুবাই, কাতার, মাসকাট, সিঙ্গাপুর, মালেয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ছাড়াও অন্যান্য আরো অনেক দেশে বাংলাদেশ বিমানের পাইলট হিসেবে কাজ করেছে।”

”নিহত জঙ্গি আবদুল্লাহর সাথে তারও ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং সেও মানিক ওরফে ফরহাদ ওরফে সারোয়ার জাহানের কাছ থেকে বায়াত গ্রহণ করে। গুলশান হামলার আগে ও পরে আবদুল্লাহ, গ্রেপ্তারকৃত পাইলট সাব্বির, সারোয়ার একত্রে নাশকতার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রেপ্তারকৃত পাইলট সাব্বির বিমান চালিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের বাসভবনে আঘাত করা অথবা বিমানের যাত্রীদের জিম্মি করে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করে। তার চাকরি ভাতা বাবদ ১০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল এবং ওই টাকাগুলো পেলেই আবদুল্লাহর মাধ্যমে সংগঠনে দান করবে বলে আবদুল্লাহকে কথা দিয়েছিল।”

গ্রেপ্তারকৃত সাব্বির এমাম সাব্বিরের মত একজন দুর্ধর্ষ ব্যক্তি বাংলাদেশ বিমানের মত সংবেদনশীল স্থানে চাকুরীরত, যেখানে সর্বদা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের যাতায়াত। এ ধরনের একজন উগ্রবাদী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব বাংলাদেশকে নিকট ভবিষ্যতে আরো একটি নতুন অনাকাঙ্খিত, ভয়াবহ ঘটনা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।