রাখাইনে চলছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : অ্যামনেস্টি

SHARE
amnesty-home_105910ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,১৮ অক্টোবর :  আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ করেছে।
এই সংকটের ওপর অ্যামনেস্টি আজ বুধবার এক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ, স্যাটেলাইট ছবি, ফটো, ভিডিও এবং অন্যান্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি বলছে, ‘এতে উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে হাজার হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ এবং শিশু একটি ব্যাপক ও পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার হয়েছেন, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সমান।’ রাখাইনে চলছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : অ্যামনেস্টি
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২০ রোহিঙ্গা নারী এবং পুরুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে অ্যামনেস্টি বলছে।
মানবতার বিরুদ্ধে এসব কথিত অভিযোগের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম চুক্তিতে ১১ ধরনের অপরাধকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যের সহিংসতায় এধরনের ৬ অপরাধ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে: খুন, বলপূর্বক নির্বাসন, নির্যাতন, ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ড।
সবচেয়ে নৃশংস অপরাধের প্রত্যক্ষদর্শীরা এসব তৎপরতার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ড, ৩৩ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন এবং সীমান্তরক্ষা বাহিনীকে দায়ী করেছে। রাখাইনে চলছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : অ্যামনেস্টি
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক পরিচালক টিরানা হাসান বলেন, ‘এই নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে প্রথম ধাপ হচ্ছে এসব অপরাধের কথা ফাঁস করে দেয়া। যারা এসব অপরাধ করেছে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি ভুয়া অভ্যন্তরীণ তদন্তের নামে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এসব ঘটনাকে কোনমতেই ধামাচাপা দিতে পারে না।’
ধর্ষণ এবং বিভিন্ন যৌন অপরাধ
অ্যামনেস্টি বলছে, তদন্তে তারা প্রমাণ পেয়েছে যে মংডুর মিন গিই গ্রাম, স্থানীয়ভাবে যার নাম তুলাতলী, এবং বুথিডং-এর কিউন পক গ্রামের কোনো কোনো নারীকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ধর্ষণ করেছে।
অ্যামনেস্টি যৌন সহিংসতার শিকার ৭ রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে ৪ জন নারী এবং ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রাখাইনে চলছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : অ্যামনেস্টি
পরিচয় গোপন করে ‘এসকে’ নামে ৩০বছর বয়সী এক নারীর সাক্ষ্য এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলছেন, ‘তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে নারীদের আলাদা করে ফেলে। আমরা ৫ নারীকে ৪ সৈন্য আটকে রাখে। তারা আমাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা-পয়সা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার ২ বছরের ছেলে শফিকে তারা লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এক আঘাতেই শফি সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। আমার বাকি ৩ ছেলেকেও খুন করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর পর তারা সব নারীকে উলঙ্গ করে। তাদের হাতের লাঠি দিয়ে আমাদের মাথায় আঘাত করার পর আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। তারা লাঠি দিয়ে আমাদের যৌনাঙ্গেও আঘাত করে। এর পর তারা আমাদের ধর্ষণ করে।’
অ্যামনেস্টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নারী ও শিশুদের ধর্ষণের পর রোহিঙ্গা বাড়িগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
রাখাইনে হত্যালীলা
অ্যামনেস্টির এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আরসার হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বেসামরিক জনগণের ওপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালানো শুরু করে। তাদের সঙ্গে কখনো কখনো যোগ দেয় স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী। রাখাইনে চলছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : অ্যামনেস্টি
এসব হামলার মুখে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা যখন পালাতে থাকেন, তখন সৈন্য এবং পুলিশ সদস্যরা পেছন থেকে তাদের গুলি করে হত্যা করে বলে অ্যামনেস্টি বলছে।
১২ বয়সী ফাতিমা অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছে, তার ৮ ভাইবোন, মা-বাবা এবং বৃদ্ধ দাদী একদিন দেখতে পায় গ্রামের অন্য অংশ থেকে ধোঁয়া উড়ছে।
ভয়ে তারা দৌড়ে বাড়ি ছেড়ে পালানোর সময় উর্দি পরা কিছু লোক পেছন থেকে তাদের ওপর গুলি চালায়।
তার বাবা এবং ১০ বছর বয়সী বোনের গায়ে গুলি লাগে। তার নিজের ডান উরুতেও গুলি লাগে।
এই সংকটের প্রকৃত চিত্র উদঘাটনের জন্য অ্যামনেস্টি রাখাইনে জাতিসংঘ তদন্তের ডাক দিয়েছে।