ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৪ আগস্ট : কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এই দুই জেলার ২৪টি উপজেলার প্রায় ৯ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় এ দুই জেলায় ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ দুই জেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ রক্ষায় ও বানভাসী মানুষকে উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার বিকেলে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণা কেন্দ্রের (জেআরসি) বৈশ্বিক বন্যা সতর্কতা পদ্ধতির (গ্লো-এফএএস) বিশ্লেষণ করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে যে, আগামী সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে ১১ আগস্ট শুক্রবার থেকে পানি বাড়ছে এবং ১৯ আগস্ট পর্যন্ত এই পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হবে। গত ২০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উজানে বন্যার মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ হবে।
দ্য ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টসের (ইসিএমডব্লিউএফ) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে হিমালয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে করে ব্রহ্মপুত্রের ভারত ও বাংলাদেশ অংশে পানি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেআরসির বৈশ্বিক বন্যা সতর্কতা পদ্ধতির (গ্লো-এফএএস) গত ১০ আগস্টের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পুরো অববাহিকা এবং গঙ্গার ভাটিতে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। আর ব্রহ্মপুত্রের উজানে গত ২০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে।
বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কুড়িগ্রাম
জেলার ৯টি উপজেলার ৫৭ ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার বিকালে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের কাঠালবাড়ী, রাজারহাটের কালুয়া ও ফুলবাড়ীর গোড়কমণ্ডল এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে বন্যার কারণে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৬০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সদরের কাউয়াহাগা এলাকায় বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে পড়ায় সকাল থেকে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
রহ্মপূত্র, তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলা নদীর বানের পানি উপজেলাকে আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে ফেলেছে। এক রাতের ব্যবধানে ৪টি নদ-নদীর বানের পানিতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, তার ইউনিয়ন ধরলা,দুধকুমর ও ব্রহ্মপূত্র নদ বেষ্টিত। ধরলা নদীর পানি স্বরণ কালের ভয়াবহ আকার ধারন করায় তার ইউনিয়নের ২২ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরম আকার ধারন করছে। ব্রহ্মপূত্র বিচ্ছিন্ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ৫২ টি চর তলিয়ে যাওয়ায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বিএসসি জানান, চর গুজিমারী, চর দাগারকুটি,বাবুরচর, গাবুরজান, নয়াডারা, শ্যামপুর, তাঁতিপাড়া, হাতিয়া ভবেশ, অনন্তপুর সহ নদ অববাহিকার বেশিরভাগ গ্রাম তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ত্রাণ তৎপরতা সচল রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলার সরকারি ও বেসরকারি সকল বিভাগকে বন্যার্তদের পাশে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার বিভাগকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টিম বাঁধ সংষ্কারের কর্ম-পরিকল্পনা ও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে মাঠে কাজ শুরু করেছে।
গত চব্বিশ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম সদরের খামার হলোখানায় সাপের কামড়ে অলিউর রহমানের স্ত্রী জ্যোস্না বেগম (২৫), পৌরসভার ভেলাকোপা এলাকার দুলু মিয়ার পূত্র বাবু (দেড় বছর) পানিতে ডুবে, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের প্রাণকৃঞ্চ গ্রামের খাতক মামুদের ছেলে লুৎফর রহমান (৩৫) মাছ মারতে গিয়ে পানিতে ডুবে এবং গোড়কমণ্ডল বস্তি গ্রামের মৃত: কাচু মামুদের ছেলে হযরত আলী (৫৫) আকস্মিক ঘরে পানি ঢোকায় আতংকে মারা যায়।
সুনামগঞ্জ
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। নতুন করে জেলার দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, ধর্মপাশা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে দেশের ১৪টি নদীর পানি বেড়েছে ১৭টি পয়েন্টে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৩৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে শেরপুরের ভুগাই নদীতে। এ ছাড়া ধরলা কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার, তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, যমুনেস্বরি বদরগঞ্জে ১৩২ সেন্টিমিটার, যমুনা বাহাদুরাবাদে ৬৩ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ৪৭ সেন্টিমিটার, টাঙ্গন নদী ঠাকুরগাঁওয়ে ২৬১ সেন্টিমিটার, সুরমা কানাইঘাটে ৫১ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জে ২৩ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা শেওলায় ১২ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন সারিঘাট পয়েন্টে ৮৪ সেন্টিমিটার, মনু নদী মনু রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্ট ৩৬৮ সেন্টিমিটার, খোয়াই নদীর বাল্লায় ২২১ সেন্টিমিটার ও হবিগঞ্জে ৪৭০ সেন্টিমিটার, ধলাই কমলগঞ্জে ২৭৮ সেন্টিমিটার, ভোগাই নদী নাকোয়াগাও ৩২০ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী দুর্গাপুরে ১০০, কংস নদী জারিয়াজঞ্জাইল পয়েন্টে ১০৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
নীলফামারী
ভারী বর্ষণে উজানের ঢলে তিস্তা নদী ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। রবিবার সকাল ৯টায় নীলফামারীর ডিমলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ পূর্বাভাস কেন্দ্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিস্তায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারী জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার গ্রাম ও চর এলাকায় মাইকিং ও ঢোল সহরত করে মানুজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম জানান, প্রশাসনের সবস্তরের সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন্যার দুর্গত মানুষের জন্য ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ১০টি মেডিকেল টিম ও একটি অতিরিক্ত হাসপাতালের মেডিকেল টিম কাজ করছে।
নেত্রকোনা
হাওর ও পাহাড় অধ্যুষিত নেত্রকোনায় তিন নদীর পানি আরও বেড়েছে। এতে চার নদীর পানিই বিপদসীমা ছাড়ানোয় জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রবিবার সকাল নয়টায় পানি পরিমাপ করে দেখেছে পাহাড়ি এলাকায় সোমেশ্বরীর পানি কিছুটা কমলেও বেড়েছে কংস, উব্দাখালি ও ধনু নদীর পানি। তবে সোমেশ্বরী এখনও বিপদসীমার ওপরে বইছে।
বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তাহের জানান, জেলার হাওরাঞ্চলের নদী ধনুর পানি নতুন করে বেড়ে বিপদসীমা পেরিয়েছে।
দুর্গাপুর পয়েন্টে পাহাড়ি সোমেশ্বরী আজ সকালেও বিপদসীমার সতি সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। তবে আগের চেয়ে পানি কিছুটা কমায় নদীর আশপাশ প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নেমেছে।
রাঙামাটি
ভারী বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসার কারণে হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গত শনিবার ডুবে যায় রাঙামাটির জুলন্ত সেতু।
ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার বাঘাইছড়ি লংগদু উপজেলায় বন্যাকবলিত নিম্ন এলাকা এখনো পানির নিচে আছে। বাঘাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা দুর্গতরা।
গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাঙামাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিচু এলাকায় বন্যার সৃষ্টির হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে নষ্ট হয়ে গেছে আউস ও আমন ফসলের।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রর ব্যবস্থাপক শফি উদ্দিন আহমেদ জানান, হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের ১৬ দরজায় পানি ছাড়া হচ্ছে।
দিনাজপুর
দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। জেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙে গেছে দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধসহ বেশ কয়েকটি নদীর বাঁধ। বন্যাজনিত কারনে জেলায় রোববার চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
বাঁধ রক্ষায় ও বানভাসী মানুষকে উদ্ধারের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে। বাড়িঘর ডুবে গিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।
এদিকে বন্যাজনিত কারণে পানিতে ডুবে, সর্প দংশনে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন- দিনাজপুর শহরের দক্ষিণ বালুবাড়ী এলাকার আবদুল হাকিমের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪৫), বালুবাড়ী ঢিবিপাড়া এলাকার এনামুল হকের ছেলে মেহেদী হাসান (১৫), সদর উপজেলার মির্জাপুর এলাকার আবদুল গফফারের ছেলে আবু নাইম (১৩) এবং বিরল উপজেলার মালঝাড় এলাকার বাবলু রায়ের স্ত্রী দিপালী রায় (৩২)।
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দিনাজপুর জেলায় গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয় বন্যা। ইতিমধ্যেই দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর, বিরল, কাহারোল, বীরগঞ্জ, খানসামা, চিরিরবন্দর ও পার্বতীপুর উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানিবন্দি ও গৃহহীন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাঁধ এলাকায়। জেলার দুই হাজার ৯৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই বানভাসী মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার সব নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের তুঁতবাগান এলাকায় দিনাজপুর শহর রক্ষা বাধের ৫০ মিটার ভেঙে গেছে। এছাড়াও দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর বাধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই নদীর পানি দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধা
গত চার দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সবকটি নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ঘাঘট নদীর পানি ৫৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া তিস্তা নদীতে পানি ৫২ সেন্টিমিটার ও করতোয়া নদীতে ৮৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
যশোর
টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে যশোরের তিন উপজেলায় বন্যাপরবর্তী জলাবদ্ধতার আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন মনিরামপুর, অভয়নগর ও কেশবপুরের দেড় লক্ষাধিক মানুষ।
বিশেষ করে হালসা, শ্যামকুড়, মশ্মিমনগর, নেহালপুর, ভোজগাতীসহ অন্তত ৯০টি গ্রাম বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ময়মনসিংহ
ভারতীয় সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় নিতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার রাতে প্রবল পাহাড়ি স্রোতে দুটি জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের ভেতর পানি ঢুকছে।
দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের কালিকাবাড়ী এজাহারের বাড়ির কাছে প্রায় ১০০ ফুট নদীর পাড় ভেঙে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করে কালিকাবাড়ী, নয়াপাড়া, জাঙ্গালিয়াপাড়া, দুধকুড়া, ভলল্বপুর, খাগগড়া ও সোহাগীপাড়া গ্রামসহ ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বহু মানুষ উঁচু রাস্তায় মালামাল, গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। একের পর এক তলিয়ে যাচ্ছে উঁচু রাস্তাগুলো। পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।
পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যাকবলিত অধিকাংশ পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪৫ হাজার ৩০৫টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার পরিবারের ঠাঁই হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
আজ রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে পঞ্চগড়-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, টানা বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয়দের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪৫ হাজার ৩০৫টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদের মধ্যে ৩০ হাজার দুর্গত মানুষ ১৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি বেসরকারিভাবে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে, শনিবার রাত থেকে জেলার বিভিন্ন নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। রোববার সকালে করতোয়ার পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। তবে আকস্মিক এ বন্যায় জেলার ৩ হাজার ৩৭৫ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে প্লাবিত হয়েছে পঞ্চগড়-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটের রেললাইন। প্রবল স্রোতের কারণে ঝলই শালশিরি এলাকার নয়নিবুরুজ স্টেশন থেকে কিসমত স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথের পাথর সরে গেছে (ওয়াস আউট)। গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
এতে পঞ্চগড় থেকে ঢাকা রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম জোনের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বালুর বস্তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ সংস্কারের চেষ্টা করছে রেল বিভাগ।
জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল এবিনিউজকে বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা জরুরিভাবে একটি আলোচনার আয়োজন করি। যাতে সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ত্রাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ উপজেলায় ৪৫ হাজার ৩০৫টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ হাজার দুর্গত মানুষ ১৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি বেসরকারিভাবে শুকনা খাবার সরবরাহসহ তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।