ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১১ জুন : নিজ দুর্গ রংপুরেই জাতীয় পার্টির বেহাল অবস্থা। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কোন্দল লেগেই রয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আগামী সংসদ ও মেয়র নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও বিদ্রোহি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে অনেকে। এনিয়ে নেতাকর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। রংপুরে জাতীয় সংসদের ছয়টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটি আসন জাপার দখলে রযেছে। আর দ্বন্দ্বের কারণে মেয়র পদটিও হারাতে হয়। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে আগামীকে জাতীয় পার্টির ভরাডুবির আশংকা রয়েছে।
জাপা সুত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৬টি আসনে প্রার্থী বাছাই শেষ হয়েছে দলটির। এরই মধ্যে ৬ প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। এতে রংপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব এরশাদের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের নাম এবারও বাদ দেওয়া হয়েছে।জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বরাবর পাঠানো প্রার্থীদের নামের তালিকায় রয়েছেন রংপুর-১ গঙ্গাচড়া আসনে মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-২ বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনে আসাদুজ্জামান চৌধুরি সাবলু, রংপুর-৩ সদর আসন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, রংপুর-৪ পীরগাছা-কাউনিয়া আসনে সদস্য জাপায় যোগ দেওয়া মোস্তফা সেলিম, রংপুর-৫ মিঠাপুকুর আসনে এসএম ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর এবং রংপুর-৬ পীরগঞ্জ সংসদীয় আসনে নুরে আলম যাদু।আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের নাম দেওয়া হলেও অনেক আসনে বিদ্রোহি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন । এরই মধ্যে তাদের প্রচারনাও শুরু হয়ে গেছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া আসনে প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার নাম রয়েছ্। তিনি বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদে এ আসনে এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ সংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে। তিনি সারাদেশের মধ্যে ভোটের হিসেবে তৃতীয় হয়েছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার ভোট। ওই সময় গঙ্গাচড়া উপজেলায় রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ, মসজিদ মাদ্রসাসহ যত উন্নয়ন হয়েছিল তার পরে আর তেমন উন্নয়ন হয়নি এ উপজেলায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি । তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মন্নোয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা চাপের কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবারও প্রার্থী হিসেবে তার নাম দেওয়া হয়নি। তাই গঙ্গাচড়া আসনে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া না হয় তাহলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করতে পারবেন বলে আসিফ জানান।
এ ব্যাপারে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক ও এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ জানান, রংপুরের ৬টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আমাকে এবারও বাদ দেওয়া হয়েছে। এবারও যদি গঙ্গাচড়া আসনে আমাকে প্রার্থী করা না হয় তাহলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব। তিনি বলেন, আমি আর ছাড় দিতে রাজি নই। আমার আমলে গঙ্গাচড়ায় যত উন্নয়ন হয়েছে এবং দলকে আমি যেভাবে সংগঠিত করেছি তাই সেখানকার মানুষ আমাকে আবারও সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চায়। আর এ কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাতীয় পার্টি থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করব এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। এ লক্ষ্য নিয়ে আমি এখন থেকে কাজ করে যাচ্ছি।এব্যাপারে স্থানীয় সরকার, পলী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমি জাতীয় পার্টি করি। দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে অবশ্যই নির্বাচন করবো। তিনি আগামী নির্বাচনে
মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমার আমলে এলাকায় অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এজন্য আগামী নির্বাচনে গঙ্গাচড়ার মানুষ আমাকে ভোট দিবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আমরা ঐক্যমতের সরকার গঠন করেছি। অন্যদলের লোক হয়ে মন্ত্রীত্ব পেয়েছি। অন্যদল করা সত্বেও প্রধানমন্ত্রী গঙ্গাচড়ার উন্নয়নের জন্য অনেক বরাদ্দ দিয়েছেন।
অপরদিকে আগামী ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
নির্বাচনে মেয়র পদে এবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তিন মাস আগেই জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৭ মার্চ রংপুর টাউন হল চত্বরে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সম্মেলন ও সমাবেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাপার প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার হাত তুলে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এর বেশ কিছুদিন পর জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আবদুর রউফ মানিক রংপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন। তিনি স্থানীয় একটি হোটেলে তার অনুসারি ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় করে এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান তার আমলে রংপুর পৌরসভায় যত উন্নয়নমুলক কাজ হয়েছে পৌরসভার ইতিহাসে এতো উন্নয়ন আর কখনো হয়নি। তাই সর্বস্তরের মানুষ আবারও তাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চায়। তাই নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে জাপানেতা আবদুর রউফ মানিক নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি নির্বাচনী কাজও শুরু করে দিয়েছেন। এদিকে গত সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৬টি আসনের মধ্যে জাপা মাত্র ২টি আসন পেয়েছিল। ৪টি হারাতে হয় আওয়ামী লীগের কাছে। একই অবস্থা উপজেলা, জেলা, চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও ইউনিয়ন নির্বাচনে। এসব নির্বাচনে দলটি ভাল করতে পারেনি একাধিক প্রার্থী এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের কারণে। আগামী নির্বাচনেও একই অবস্থা হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশেষকরা মনে করেন। এব্যাপারে মহানগর জাপার সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ জনসভায় আমাকে সিটি মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন প্রায় চার মাস আগে। আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে সিটি এলাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, দল থেকে আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে এখানে জাপা থেকে অন্য কেউ যদি মেয়র পদে নির্বাচন করে তবে তা হবে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের কাজ। এটা দলের চেয়ারম্যানকে অপমান করা হলো। তাই দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে তিনি মনে করেন। মোস্তফা বলেন রংপুর হচ্ছে জাপার ঘাটি । এখানে জাপা চেয়ারম্যান যা বললেন জাপানেতাকর্মী ও জাপা ভক্তরা তাই করবে। তিনি বলেন ,দলে কোন কোন্দন নেই। জাপার দুর্গ রংপুর দুর্গই থাকবে। এবার নির্বাচনে তা প্রমাণ করবে রংপুরের মানুষ। তিনি বলেন, গত সিটি নির্বাচনে জাপার একাধিক প্রার্থী থাকায় জাপার ভরাডুবি হয়েছে। এবার আর তা হবে না।
সৌজন্যে : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ।