জনকল্যাণ নয়, বিএনপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুটপাট: প্রধানমন্ত্রী

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিবেদক,০৬ মে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি দুর্দিনেও নেই, উন্নয়নে নেই। আছে তারা লুটপাটে। এটা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। জনগণের কল্যাণে তাদের কোনো মনোযোগ নেই। আজ শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, আমি আপনাদের সামনে খালি হাতে আসিনি। অনেক প্রকল্প নিয়ে এসেছি। যে কাজগুলো ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলো উদ্বোধন করেছি। যেগুলো করব, সেগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু এখানে পর্যটক আসে, সেহেতু তাদের যাতায়াতের জন্য বিমান নিয়ে এসেছি। এই বিমান আজ কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম অবতরণ করলো। আমি এই বিমানের মাধ্যমে এখানে আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনার ঘোষণা দিলাম।’

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই এয়ারপোর্টটি (বিমানবন্দর) জরাজীর্ণ ছিল, ৯৬ সালে সরকারে এসে এটিকে উন্নত করে যাই। এই বিমানবন্দরকে উন্নত করার জন্য আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।’
জনকল্যাণ নয়, বিএনপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুটপাট: প্রধানমন্ত্রী
বিমানবন্দরটি যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়, সে জন্য রানওয়ে প্রশস্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ কক্সবাজারবাসী অবহেলিত ছিল আমি জানি। যখনই কোনও দুর্যোগ দেখা দিয়েছে আমরা এসেছি, আপনাদের সেবা করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। এত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিএনপি নেত্রী জানতেন না। আমি সংসদে তোলার পর উনি বলে দিলেন, যত মরার কথা, তত মানুষ মরে নাই। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, কত মানুষ মরলে আপনার তত মানুষ হবে? এরপর আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ছুটে এসেছিলোম। আসার পথে কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। রাস্তা ভাঙা ছিলে। এরইমধ্যে এসে সমস্ত দ্বীপাঞ্চল ঘুরে ঘুরে রিলিফ ওয়ার্ক করেছি। তখন পর্যন্ত বিএনপি সরকারের কেউ আসেনি। যখন কুতুবদিয়াতে নামি লাশের পর লাশ পড়ে ছিল। নেভির লোক কোনোভাবে লাশ দাফন করেছিল। সেইদিনই সেনাবাহিনীর একটি দল এসেছিল। প্রত্যেক এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের লাশ, শিশুর লাশ আমি নিজে দেখেছি। সাপ গরুর লাশ, ছোট্ট শিশুর লাশ ভেসে ভেসে আসছে। সেই বিভৎস দৃশ্য। যতটা পেরেছি মানুষকে সহায়তা করেছি। রিলিফ দিতে এসে হুমকির সম্মুখীন হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ গড়ে উঠেছে। এদেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ রয়েছে। আজ আমরা মাতৃভাষায় কথা বলি। সেটাও আওয়ামী লীগের অবদান। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। তাই জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছর বেঁচে ছিলেন বঙ্গবন্ধু।  বঙ্গবন্ধু যখন উন্নয়নের পথে পা বাড়ালেন তখন তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
জনকল্যাণ নয়, বিএনপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুটপাট: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতা দখল করে, তারা জনগণের কথা ভাবে না। তারা ক্ষমতা ভোগ করে আর কিছু এলিটকে লুটপাটের সুযোগ করে দেয়। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমি শাসক না জনগণের সেবক হিসেবে বাংলাদেশ পরিচালন করব। আমার বাবা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, আমি জানি এটা আমার জন্য কঠিন পথ। কারণ এই মাটিতে আমার বাবা-মা-ভাইসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একইদিনে মেজ ফুফুর বাড়ি সেজ ফুফুর বাড়িতে আক্রমণ করে তার স্বামী ছেলেকে হত্যা করেছে, আমার ছোট ফুফুর বাড়িতেও আক্রমণ করে ফুফাকে না পেয়ে ফুফুকে গৃহবন্দি করেছে। এভাবে হত্যাযজ্ঞ চলেছে।

৭৫ এর ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিয়ে দেশে ফেরার কারণ ব্যাখা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মানুষ আপনজন মারা গেলে একটা শোক সইতে পারে না। আর আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম ঠিক। কিন্তু একটা দিন যখন শুনলাম আমার মা, বাবা ভাই-কেউ নেই, আপনারা একটু উপলব্ধি করতে পারেন, অন্তত যারা স্বজন হারিয়েছেন তারা বুঝবেন যে কীভাবে আমাদের দিন কেটেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রবাসে থাকতে হয়েছে, দেশে ফিরে আসতে পারনি। দেশে আসতে দেয়নি আমাকে। ছয় বছর পর আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভাপতি নির্বাচিত কবে, জনগণের সমর্থন নিয়ে জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসেছিলাম একটাই কারণে, সব শোক, সব ব্যাথা বুকে ধারণ করে শুধু বাংলার মানুষ, যে মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন, যে মানুষের জন্য আমার মা জীবন দিয়েছেন, ভাইরা জীবন দিয়েছে, সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করে, এই মানুষকে নিয়ে আমার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছে, যে বাংলার দুঃখী মানুষ উন্নত জীবন পাবে, ক্ষুধার্থ মানুষ ক্ষুধার অন্ন পাবে, বিনা চিকিৎসায় কোনো মানুষ মারা যাবে না সে জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষ চিকিৎসা পাবে, প্রতিটি মানুষ গৃহ পাবে, প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মত মানুষ হবে। বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে। তার (বঙ্গবন্ধু) সেই চিন্তা-চেতনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সেই শোক, সেই ব্যাথা বুকে নিয়েও আমি আপনাদের মাঝে ছুটে এসেছি শুধু আপনাদের কল্যাণ করার জন্য।

হত্যার পর জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, চলাফেরার অধিকার সংকুচিত করে দিয়েছে। প্রতি রাতে জিয়াউর রহমান কারফিউ ঘোষণা করেছে। নিজে স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারে সারাবিশ্ব থেকে পর্যটকরা আসেন। সে বিবেচনা করে আমরা এখানে বিমানের বোয়িং চলাচল শুরু করেছি। ভবিষ্যতে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে।

এর আগে জনসভাস্থলের পাশে ১৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।