যৌনপল্লির কাস্টমার অপরাধী! দিল্লির পথে যৌনকর্মীরা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,০২ মে ২০১৭ : যৌনপল্লির কাস্টমারদের এ বার অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে। এমনই সংস্থান থাকছে এ বার আইনে। আর, তারই জেরে দিল্লিতে এ বার প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যৌনকর্মীরা।

কারণ, ওই আইন চালু হলে, যৌনকর্মীদের প্রধানত দুই ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হবে বলে জানানো হয়েছে। এক, যৌনপল্লির বাইরে কোনও যৌনকর্মীর সঙ্গে ‘যা খুশি তাই’ করতে পারবেন কোনও কাস্টমার। যার জেরে, সংশ্লিষ্ট যৌনকর্মী অনাকাঙ্খিত কোনও ঘটনারও সম্মুখীন হতে পারেন। এবং, দুই, এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধের কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা, এখনও পর্যন্ত যেভাবে এ দেশে এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধের কাজে সাফল্য এসেছে, তার পিছনে অন্যতম কারণ হিবেসে এই বিষয়ে বিভিন্ন যৌনপল্লিতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কন্ডোম ব্যবহারে যৌনকর্মীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি রয়েছে।

এমনই পরিস্থিতিতে, কলকাতা সহ এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের যৌনপল্লিতে এক বছরের প্রতিবাদের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার, পয়লা মে থেকেই শুরু হচ্ছে এই প্রতিবাদ। একই সঙ্গে, ওই দিন মে দিবসেও অংশ নিচ্ছেন কলকাতা সহ এ রাজ্যের বিভিন্ন যৌনপল্লির যৌনকর্মীরা। ‘গতর খাটিয়ে খাই, শ্রমিকের অধিকার চাই’, ১৯৯৫ থেকেই এমন স্লোগানের উপর ভিত্তি করে অধিকার আদায়ের দাবিতে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন কলকাতা সহ এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের যৌনকর্মীরা। আর, এই বছর কলকাতার সাতটি সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ৩৫টি যৌনপল্লিতে মে দিবসে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দাবিতে প্রতিবাদের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের যৌনকর্মীদের অন্যতম সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা, ডাক্তার স্মরজিৎ জানার কথায়, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে এমন একটি বিল আনা হচ্ছে, যেখানে যৌনপল্লির কাস্টমারদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে ঘুরিয়ে যৌনপল্লিগুলি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। যৌনপল্লিগুলি তখন হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু, এর ফলে প্রধানত দু’টি বিপদ দেখা দেবে।’’ কোন ধরনের বিপদ? তিনি বলেন, ‘‘এই বিল আইনে পরিণত হলে, যৌনপল্লির কাস্টমারদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে। যে কারণে, যৌনকর্মীরা তখন যৌনপল্লির বাইরে ছড়িয়ে পড়বেন। তখন, কোনও কাস্টমার কোনও যৌনকর্মীর সঙ্গে যা খুশি তাই করতে পারেন।’’

একই সঙ্গে ডাক্তার স্মরজিৎ জানা বলেন, ‘‘অন্য বিপদটি আরও ভয়ঙ্কর। এ দেশে এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধের কাজে এখনও পর্যন্ত যে সাফল্য এসেছে, তার জন্য যৌনপল্লিগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’’ কী সেই ভূমিকা?  তিনি বলেন, ‘‘এইচআইভি-এইডসের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে যৌনপল্লিগুলিতে নিয়মিত কর্মসূচি রয়েছে। তার জন্য যৌনকর্মীদের মধ্যে কন্ডোম ব্যবহারের হারও বেড়েছে। যৌনপল্লির বাইরে যৌনকর্মীরা ছড়িয়ে পড়লে এইচআইভি-এইডস প্রতিরোধের কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’ তা হলে, উপায়? দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এই বিষয়টি আমরা সংসদের সব সদস্যকে চিঠির মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করব।’’

শুধুমাত্র তাই নয়। ডাক্তার স্মরজিৎ জানা বলেন, ‘‘এই বিল আইনে পরিণত হলে যৌনকর্মী এবং এই পেশার উপর চাপ তৈরি হবে। এর সঙ্গে প্রধানত এই দুই বিপদও দেখা দেবে। তাই এর বিরুদ্ধে আমরা লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাব। তার জন্য এক বছরের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে৷ মে দিবস থেকেই শুরু হচ্ছে আমাদের এই কর্মসূচি।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যে অল ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক অফ সেক্স ওয়ার্কার্স রয়েছে, তার সদস্যদের নিয়ে আগামী জুন মাসে দিল্লিতে আমরা প্রতিবাদে শামিল হচ্ছি।’’