জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৯ মার্চ : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই দেশে কোনো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ হোক, সেটা আমরা চাই না। এর বিরুদ্ধে আমরা যে কঠোর অবস্থান নিয়েছি, তা অব্যাহত থাকবে। জঙ্গিরা রেহাই পাবে না। জঙ্গিরা কে কোথায় বাস করে সবাই তা খেয়াল রাখবেন। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

গতকাল  শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশে কোন জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না। যে যেখানে আছেন সেখানেই তাদেরকে সেভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের নেতা-কর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এজন্য সতর্ক থাকতে হবে, কারো সন্তান যেনো কোনভাবে জঙ্গিবাদের পথে না যায়।

কারো এলাকায় কোন জঙ্গি বা সন্ত্রাসী রয়েছে কিনা এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহবান জানান তিনি।

তিনি সমাজের সকল শ্রেণী পেশার নাগরিকদের নিয়ে তার সরকারের জঙ্গিবাদ বিরোধী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘ঐ সন্ত্রাসী, জঙ্গি এবং মাদকাশক্তি থেকে যেন যার যার সন্তানরা দূরে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাভাই সৃষ্টি করে প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র হাতে নিয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের মদদে তৎপরতা চালিয়ে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চালু করা হয়েছিল, তা দমনে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ৫শ’ জায়গায় জঙ্গীরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, ১০ ট্রাক অস্ত্রের চোরাকারবার দেশে ধরা পড়েছে। এর সঙ্গে দেখা গেল খালেদা জিয়ার মন্ত্রীরাই জড়িত। সেটাও আদালতে প্রমাণ হয়ে তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে।’

এসময় প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার ছেলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে বিচারের সম্মুখীন হয়েছে, খালেদা জিয়া নিজে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে এখন আদালতে গিয়ে মামলা মোকাবিলা করতে ভয় পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন মামলা আদালতে গিয়ে মোকাবেলার তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা কিন্তু যেকোন অবস্থা মোকাবেলা করতে জানি। কারণ আমাদের সততার জোর আছে। সততার শক্তি আছে। সততা একজন রাজনীতিবিদের জন্য বড়ো শক্তি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন আমরা সততার সঙ্গে রাষ্ট্রপরিচালনা করছি বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন করেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। যে দেশে কোনো দারিদ্র্যতা থাকবে না, মানুষ খাদ্যে কষ্ট পাবে না। ভাত-কাপড়ের অভাব হবে না। আজ আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ২০২০ সালে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। আর ২০২১ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি পালন করব, তখন এই বাংলাদেশ হবে সমৃদ্ধ ও মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ। এভাবেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বহু স্বাধীন দেশ আছে যেখান থেকে শত বছরেও মিত্র বাহিনী ফেরত যায়নি। বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে তিন মাসের মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী মিত্র বাহিনীকে ফেরত নিয়েছিলেন।

শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম, ওলামায়ে কেরামসহ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও ছেলেমেয়ে যেন এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। সম্পৃক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবস্থা নিতে হবে। নিজের সন্তানের খবর নিতে তারা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, কী করে। মাদকাসক্তি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ থেকে নিজ নিজ সন্তান যেন দূরে থাকে, তারা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়; ভবিষ্যতে এই দেশ পরিচালনার মতো উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে, এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভাব নেই উল্লেখ করে পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, রাজনীতি করি বাংলাদেশের জনগণের জন্য, রাজনীতি করি পিতার আদর্শে। জনগণের জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে যেখানে প্রস্তুত, সেখানে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ এনে ভয় দেখাবে, আমি তো ওরকম বাবার সন্তান না। আমি শেখ মুজিবের সন্তান।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কানাডার সেই ফেডারেল কোর্ট বলে দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের সকল অভিযোগ মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট। অন্তত বাংলাদেশের মানুষের সম্মান আমরা রেখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌত্ব রক্ষায় যারা অতন্ত্র প্রহরী, বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী- তাদেরকে একটি স্বাধীন দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনী হিসেবে আমরা গড়ে তুলেছি এবং জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আওতায় আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ গ্রহণ করে উন্নয়ন করে যাচ্ছি। পুলিশ বাহিনী, বর্ডার গার্ড, আনসার ও ভিডিপি, র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রত্যেকটি বাহিনীকে আমরা একটা স্বাধীন দেশের উপযুক্ত করে গড়ে তুলে দেশের মানুষকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের হাত থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।

সভায় বক্তৃতা করেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোমেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সুর্প্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাওলানা খন্দকার গোলাম মওলা নকশেবন্দি, সাংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এমপি, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও সাদেক খান বক্তৃতা করেন।

সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং সহপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা পরিচালনা করেন। জাতির পিতার ওপর কবিতা আবৃত্তি করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ। সভায় মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ,আওয়ামী লীগ এবং তাঁর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির পিতা এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহত তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, জাতীয় চারনেতা এং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।