১৪/০৮/২০১৬
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ১৯৯৬ সাল থেকে পলাতক এই খুনিদের সন্ধান ও প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কয়েকটি দেশের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। তবে সাজা এড়াতে পালিয়ে বেড়াতে থাকা এই খুনিদের অনেকেই একসময় বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেছেন। জাতির জনকের খুনিরা জাতির প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৭৫ সালে পরিবারসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের অশুভ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের পরে বঙ্গবন্ধুর অনেক খুনিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্মীকরণ করা হয় এবং বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোয় লোভনীয় পদে তাদের বসানো হয়।
জাতির জনকের ১২ খুনির মধ্যে পাঁচজনকে আটক করা সম্ভব হয় এবং ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়। এরা হলেন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মুহিউদ্দিন আহমেদ।
খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ ও মোসলেহউদ্দিন খান এই ছয়জন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে পলাতক। এছাড়া অন্য আসামি আজিজ পাশা ২০০১ সালের ২ জুন জিম্বাবুয়েতে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, খুনিদের ফেরত আনার প্রক্রিয়া ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু হয় এবং তখন একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে এ প্রক্রিয়া আরও জোরদার হয়। ওই বছর সিঙ্গাপুরে ইন্টারপোলের ৭৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এই খুনিদের খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়। এরই মধ্যে সরকার ইন্টারপোলের মাধ্যমে খুনিদের ফেরত আনার জন্য নোটিশ দিয়েছে এবং ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড লিস্টে’ তাদের নাম আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও জানান, নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায় আছে বলে সরকারের কাছে তথ্য আছে। এছাড়া ধারণা করা হয়, আব্দুর রশিদ পাকিস্তান বা লিবিয়া, শরিফুল হক পাকিস্তান, আব্দুল মাজেদ সেনেগাল ও মোসলেহউদ্দিন জার্মানিতে আছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, রাশেদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী ও শরিফুল হক বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তাদের আত্মীকরণ প্রক্রিয়া ১৯৭৫ সালে শুরু হয় বলে তিনি জানান।
রাশেদ চৌধুরী সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন ১৯৬৯ সালে। ১৯৭৬ সালে তার প্রথম কূটনীতিক পদ ছিল জেদ্দায় দ্বিতীয় সচিব হিসেবে। এ খুনি নাইরোবি, কুয়ালালামপুর, টোকিও ও ব্রাসিলিয়ায় প্রথম সচিব ও কাউন্সিলর পদে কাজ করেছেন। তাকে ১৯৯৬ সালের জুলাইয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার ব্যক্তিগত ফাইল থেকে জানা যায়, ওই সময় তাকে ঢাকায় ফেরত আসার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফেরত আসেননি। ওই সময় রাশেদ ব্রাসিলিয়ায় কর্মরত ছিলেন। সেখানকার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ইফতিখারুল করিম ঢাকায় একটি চিঠি পাঠিয়ে জানান, রাশেদ সাও পাওলো হয়ে সান ফ্রান্সিসকো চলে গেছেন। রাশেদ চৌধুরী লাল পাসপোর্ট নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন।
নূর চৌধুরী ১৯৭৬ সালে তার প্রথম পোস্টিং পান ব্রাসিলিয়ায়। পরবর্তীতে তাকে আলজিয়ার্স ও হংকং এ বদলি করা হয়। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত, কাউন্সিলর ও মিনিস্টার পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তার শেষ পোস্টিং ছিল হংকং এ মিনিস্টার হিসেবে । নূর চৌধুরী লাল পাসপোর্ট নিয়ে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং একই বছর একই পাসপোর্ট নিয়ে কানাডায় প্রবেশ করেন।
শরিফুল হকের প্রথম পোস্টিং ছিল বেইজিং এ ১৯৭৬ সালে এবং তিনি সেখানে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ছিলেন। এরপর তাকে হংকং এ পোস্টিং দেওয়া হয় এবং তিনি সেখানে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন। এরপর তাকে কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কাজ করার পরে বিএনপি সরকারের সময়ে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। ধারণা করা হয় শরিফুল হকের কেনিয়া এবং জিম্বাবুয়েতে ব্যবসা আছে।