ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর প্রতিনিধি, সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫ || চৈত্র ১১ ১৪৩১ :
ফার্মেসি মালিকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন স্বীকৃতি না থাকলেও ডাক্তারদের মতোই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এতে অনেক রোগীর জীবন হচ্ছে বিপন্ন। বিশেষ করে পুরনো ফার্মেসি মালিকদের অনেকেই মুনাফার কারসাজিতে বেশ অভিজ্ঞ। সে কারণে পল্লী চিকিৎসার নামে ঔষধ দিয়ে সাধারণ রোগীদের ‘পকেট কাটার’ নানা কৌশল অবলম্বন করে লাভও করতে পারছেন বেশি। এরকম একটি ফার্মেসি হচ্ছে অজয় মেডিকেল হল।
Advertisement
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর চম্পকনগর বাজারের পল্লী চিকিৎসক রতন বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তারের মতোই চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে। নিজেই প্রেসক্রিপশন করেন। ফার্মেসিতে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চিকিৎসা প্রদান করাসহ নামে বেনামে নিম্ন মানের ঔষধের ব্যবসাও করছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে না কোন প্রকার সিল বা অফিসিয়াল প্যাড। সাদা কাগজে লিখে করছেন প্রেসক্রিপশন। ডিএমএফ কোর্স করে প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি ডাক্তাদের মতোই প্রেসক্রিপশন করছেন। বিএমএফ কোর্সটি পল্লী এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কথা বললেও উপজেলার বাজারে এরকম ভাবে প্র্যাকটিস এর নাম করে রোগী দেখে ঔষধ বিক্রি করছে। অজয় মেডিকেল হল সাইনবোর্ড এ ঔষধ বিক্রেতা লেখা দিয়ে এসব করে আসছে।
নতুন ঔষধের জেনেরিক কোন কোন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় তা ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন দেখে রতন বিশ্বাস একইভাবে প্রেসক্রিপশন করেন। প্রতিটি রোগীকে প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক ঔষধ প্রেসক্রিপশন করেন। রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের প্রেসক্রিপসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েও রতন বিশ্বাস তার ফার্মেসীর ঔষধ চড়া দামে বিক্রয় করে। এছাড়াও গর্ভবতী ও শিশুদের চিকিৎসা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, উপজেলার একাংশ থেকে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক দরিদ্র সাধারণ মানুষ ডাক্তার ভেবে অন্ধ বিশ্বাসে অজয় মেডিকেল হলে চিকিৎসা নিতে আসে। সাধারণ রোগীগুলোকে সিরিয়াল দিয়ে ২/৩ ঘন্টা রেখে নিম্নমান ও স্যাম্পল ওষুধ বিক্রয় করছে। অসুখের ধরণ শুনে কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে প্রেসক্রিপশন করে আসছে।
Advertisement
সাধারণ রোগীরা জানায়, অজয় মেডিকেল হলে অধিকাংশ সময়ই ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের বাইরে অন্য কোম্পানির ঔষধ দেয়। আর প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে গেলে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ছাড়াও বিভিন্ন ঔষধ দিয়ে দেয়। যে কোন অসুস্থতায় এ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ দিয়ে দেয়। এর পাশাপাশি নামধারী ইউনানী যৌন উত্তেজক ঔষধ বিক্রি করে। এন্টিবায়োটিক ঔষুধ প্রয়োগের ফলে বিপরীত ফল হয় প্রায় প্রতিনিয়তই। আবার দেখা যায়, নিজেই প্রেসক্রিপশন করে শিশু বৃদ্ধ মহিলাদের ইনঞ্জেকশন পুশ করে থাকে।
একাধিক রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি মনিপুরের সজিবের শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যার চিকিৎসা নিতে গেলে বিভিন্ন জেনেরিক এর ঔষধ দেয়া অজয় মেডিকেল হল। এতে এক ডোজ ঔষধ সেবনের ফলে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে শিশুটি জেলা সদর হাসপাতালে দীর্ঘ ৭ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠে।
কিন্তু সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়- ঐ নিয়মের বাস্তবায়ন একেবারেই নেই। জাতীয় ঔষুধ নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে ৩৯টি ঔষুধ ছাড়া কোন ঔষধ ব্যবস্থাপত্রবিহীন বিক্রি করা যাবে না। এছাড়াও ঔষুধের দোকানের ভিতরে তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নীচে রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু অজয় মেডিকেল হলে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ডিএমএফ কোর্সের সার্টিফিকেট নিয়েও কথা উঠেছে। এ বাজারে রতন বিশ্বাসের মত আরও অনেকেই রোগীদের প্রেসক্রিপশন করে নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করে থাকেন বলে বিস্তর অভিযোগের পাশাপাশি প্রমাণও মিলেছে।
এ বিষয়ে জানতে পল্লী চিকিৎসক রতন বিশ্বাসের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. আবু কাউছার বলেন, চিকিৎসক ছাড়া অন্যকেউ প্রেসক্রিপশনে এ্যান্টিবায়োটিক লিখা সম্পূর্ণ অন্যায়। কোন ফার্মেসী হোল্ডারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. এমরাম উল্লাহ বলেন, রতন বিশ্বাস নিজস্ব কোন সিল বা প্যাড ব্যবহার করতে পারবে না। ডিএমএফ কোর্সপ্রাপ্ত পল্লী চিকিৎসকরা কিছু এ্যান্টিবায়োটিক লিখতে পারে কিন্ত সব ধরনের এন্টিবায়োটিক লেখা সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।