ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ || মাঘ ৯ ১৪৩১ :
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি মনে করেন, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছে না।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এই প্রশ্ন তোলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি এ কথা গতকালও বলেছি, আমাকে একজন সাংবাদিক ভাই এ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে তাহলে একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে নির্বাচনের সময়ে।”
তিনি বলেন, “আমি কথাটা বলছি যে, এর কারণ আছে। কারণ হচ্ছে, আমরা দেখছি যে, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছেন না।”
‘ন্যূনতম বিষয়ে ঐক্যমত জরুরি’
ফখরুল বলেন, ‘‘আসাদের মৃত্যু, আবু সাইদের শাহাদাত বরণ এবং আরো অসংখ্য মানুষের জীবনদান একাত্তর সাল থেকে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য সেটাকে যদি অর্থবহ করতে হয়; তাহলে যেটা প্রয়োজন, ন্যূনতম বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমরা যারা একসাথে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করছিলাম, ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। এখন যদি কোনো পরিবর্তন করতে হয়, পরিবর্ধন করতে হয়, সেটাও সামনে আসতে পারে। ওটাকে সামনে রেখেই আমাদের এগুতে হবে।”
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শহীদ আসাদ পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।
Advertisement
‘দ্রুত নির্বাচন নইলে অন্য শক্তির উত্থান হতে পারে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘একটা কথা আমি বলি, যে কথা বললে পরে আমার সমালোচনাও হয়। আমি বলি যে, নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। কেন বলি এই কথাটা, আমি বারবার বলার চেষ্টা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, যে নির্বাচন থেকে আমরা ১৫ বছর বঞ্চিত; এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের জনগণ তারা তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবার একটা সুযোগ পাবে।”
‘‘আপনারা দেখছেন, জোর করে সেই বিষয়টাকে যদি বিতর্কিত করে ফেলা হয়, তাহলে তো জনগণ আবার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। আমাদের যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এই ধরনের নির্বাচন যদি দ্রুত না হয়, সময়ক্ষেপণ করা হয়, তাহলে অন্যান্য শক্তিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। তখন জনগণের যে চাহিদা, সেই চাহিদা থেকে তারা পুরোপুরিভাবেই বঞ্চিত হয়।”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা একথা বারবার বলতে চাই, নির্বাচনে কে আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেটার জন্য আমরা লড়াই করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। আমি সেই কারণে বলেছি, আমাদের দরকার সত্যিকার অর্থেই বর্তমান যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে; সেই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক।”
‘‘স্বাভাবিকভাবে একটা ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পরেই জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত সমাজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই অবস্থায় কিন্তু আমরা সেই ধরনের একটা ব্যবস্থা দেখে এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না যে; দেশের মানুষের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।”
‘নির্বাচনের জন্য কত অপেক্ষা?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন রকম প্রোগ্রাম আছে। সেই কর্মসূচি নিয়ে তারা এগুতে চায়। তবে একটা বিষয় সবাই একমত, একটা নির্বাচন হওয়া দরকার। নির্বাচনটা শুধু একটা দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। নির্বাচনটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য একটা পথ সৃষ্টি করা, একটা দরজা খোলা।”
‘‘আজকে প্রশ্ন উঠছে, সংস্কার সবগুলো করে নির্বাচনে যাওয়ার। তাহলে কী আমরা ৪/৫ বছর ধরে অপেক্ষা করব বা যতদিন সংস্কার সম্পন্ন না হয় ততদিন ধরে অপেক্ষা করবে জনগণ? তারা তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমরা এখনো দেখছি, আমাদের আমলাতন্ত্র আগের যে ব্যবস্থা ছিল, সেই ব্যবস্থায় তারা এখনো সচিবালয় থেকে শুরু করে সমস্ত প্রশাসনে একইভাবে ভূমিকা পালন করছে। কোনো রদবদল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজগুলোতে সেই ধরনের লেখাপড়া হয় না, স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এটা অতীত থেকেই এসছে এবং সেই পরিবর্তন এত অল্প সময়ে সম্ভবও নয়। কিন্তু আমরা সেই পরিবর্তনগুলো চাই।”
‘‘সেই কারণে বলেছি, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচন দ্রুত হলে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তার যে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট টু পিপলস থাকবে, সেগুলো পালন করতে অবশ্যই দায়বদ্ধ থাকবে।”
Advertisement
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর সভাপতিত্বে ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুফুর রহমান, অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান আসাদ, শহীদ আসাদের ছোট ভাই আজিজুল্লাহ এম নুরুজ্জামান নূর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।