বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের পেছনে কারা জড়িত, তা জেনেছেন দাবি করলেও তারা কারা তা প্রকাশ করেননি র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
“যারা পেছন থেকে খেলছেন, আমরা জানি কারা খেলছেন,” বলে তিনি তাদের হুঁশিয়ার করেছেন এভাবে, “এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠী স্বার্থে, ব্যক্তি স্বার্থে দানব নিয়ে খেলছেন। দানবের হাতে আপনারা নিশ্চিহ্ন হবেন।”
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের জড়িয়ে পড়ার তথ্য প্রকাশের প্রেক্ষাপটে রোববার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় একথা বলেন র্যাব প্রধান।
গত দেড় বছরে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যার ছয় দিনের মধ্যে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের কাছে পুলিশের উপর হামলা হয়।
দুটি ঘটনায়ই নিহত হামলাকারীদের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন বেশ কিছুদিন আগে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্তত ১০ জন নিখোঁজ যুবকের তালিকা দেয়, যারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং তরুণ-যুবকদের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়া ঠেকাতে করণীয় ঠিক করতে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যেখানে র্যাব প্রধানসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বেনজীর বলেন, “এখানে (বাংলাদেশে) কেউ কিছু করে সাকসেসফুল হবেন না। এই শক্তিকে আমরা পরাজিত করেছি, আরেকবার করব।
“সুফিদের দেশ, সাধকদের দেশ, বাউলদের দেশ, ফকিরের দেশ, সন্ন্যাসীদের দেশ, রবীন্দ্রনাথের দেশ, নজরুলের দেশ, বঙ্গবন্ধুর দেশে এগুলো (জঙ্গি তৎপরতা) হবে না।”
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দেশের ১৬ কোটি মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপর জোর দিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, “আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলে এদেশের ইঞ্চি ইঞ্চি করে এসব মুষ্টিমেয় লোকজনকে খুঁজে বের করে নিচিহ্ন করার ক্ষমতা রাখি।
“দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আমাদেরকে বোধ হয় এই জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতে হবে।”
বিপথে যারা গেছেন, গুলশান ও শোলাকিয়া নিহত জঙ্গিদের পরিণতি দেখিয়ে নতুন করে কাউকে সে পথে পা না বাড়ানোর পরামর্শ দেন বেনজীর।
বেনজীর আহমেদ (ফাইল ছবি)
“আজ লাশগুলো অ্যাবানডেন্ড। কিশোরগঞ্জে জানাজা পড়ার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা অনুরোধ করব, যারা বিপথে গেছেন, ফিরে আসেন। রাষ্ট্র-সমাজ আপনাদের পুনর্বাসিত করার জন্য আইনসঙ্গত যা কিছু করার দরকার করবে।”
যেসব ভ্রান্তি তরুণদের প্ররোচিত করছে, তা দূর করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তা-ব্যক্তিদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
সভায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ১৯৯২ সালে ধর্মকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের সূচনা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তা ব্যাপকতা পায়।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর একটি মহল তার বিপরীতে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমকে উস্কে দেয়, বলেন তিনি।
“তারপর থেকে বাংলাদেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের শুরু হয়েছে।”