ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত প্রতিনিধি .শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ || পৌষ ৬ ১৪৩১ :
চাঞ্চল্যকর গোপীবাগে ৬ খুনের মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ৮ বছরেও। বিগত ৮ বছরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার সময় নেয়া হয়েছে ১১৮ বার। কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে তা বলতে পারছে না তদন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ। বিচার তো দূরের কথা, তদন্তই শেষ না হওয়ায় ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’ অর্থাৎ বিলম্বিত বিচার, বিচার অস্বীকার করার শামিল প্রবাদের পথেই হাঠছেন তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। বার বার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বদল হচ্ছে।
Advertisement
তদন্ত এখন নিয়তির বিধান বলেই মনে করে ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’ প্রবাদকেই ভাগ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন নিহতের স্বজনরা। পুলিশ, ডিবি পুলিশের তদন্ত শেষে এখন তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হচ্ছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর গোপীবাগের বাসায় লুৎফর রহমান ফারুকসহ ৬ জনকে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় খুনী কারা তা শনাক্ত করে খুনীদের গ্রেফতার করার জন্য দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ৮ বছর পার হয়ে গেছে। কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে, খুনী শনাক্ত হবে, তা এতটাই অনিশ্চিত যে এখন আর কেউই জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছেন না।
Advertisement
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য গত ৮ বছরে তদন্ত সংস্থা সময় নিয়েছে ১১৮ বার। আরও কতবার সময় নেয়া হবে তার হিসাব কারও জানা নেই। গোপীবাগ ৬ খুনের মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, নিহত লুৎফর রহমান ফারুক পীর ছিলেন। এ কারণে তার অনেক মুরিদ ছিলেন, যারা তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তিনি নিজেকে সবার কাছে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে দাবি করতেন। যার কারণে আগেও রাজধানীর বিবির বাগিচায় লুৎফর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয় এবং গেন্ডা্রিয়া ও গোপীবাগে হামলার চেষ্টা করা হয়। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর মাগরিবের নামাজের আগে ১০-১২ জন লোক ধর্মীয় বিষয়ে জানার জন্য এসেছে বলে জানায়। লুৎফর রহমান ফারুক সবাইকে দরবার ঘরে বসতে দিয়ে তাদের খাবারের ব্যবস্থার জন্য মুরিদ শাহিনকে বাজারে পাঠায়। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে লুৎফর রহমান ফারুক, তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম ফারুক, তার মুরিদ শাহিন, মজিবুর, মঞ্জুরুল আলম, রাসেল ভূইয়া-সবাইকে মুখে স্কচটেপ দিয়ে মুখ আটকিয়ে, হাত-পা বেঁধে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। ওই ঘটনায় পীর লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক ওয়ারী থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তদন্তের স্বার্থে এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, হাদিসুর রহমান সাগর, জুলফিকার বিন সাদ ওরফে আবু ওয়াক্কাস, মামুনুর রশীদ রিপন, সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম ওরফে জিতু ওরফে নিরব ওরফে নিয়ন ওরফে হিমু, সৈয়দ আল আমিন, তরিকুল ইসলাম, আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আঃ হাদী, মোঃ আজমির অমিত ও মোঃ গোলাম সরোয়ার, জাহাঙ্গীর হোসেন। বর্তমানে আসামিরা কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু তদন্ত ওই পর্যন্তই যেন শেষ হয়ে শেষ হচ্ছে না। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান গত ১৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছিলেন। ওইদিনও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রতিবেদন দাখিল করতে না পেরে বার বার সময় প্রার্থনা করছে। আদালত সময় দিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই পার হয়ে গেছে ৮ বছর। মামলার বাদীসহ নিহতের স্বজনরা বিচারের আশায় এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরে ত্যাক্ত, বিরক্ত, ক্লান্ত, অসহায়। নিহত লুৎফর রহমান ফারুকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক মামলা সম্পর্কে গণমাধ্যমে বলেছেন, গত ৮ বছর হয়ে গেল এখনও মামলার তদন্তই শেষ হলো না। বিচার তো দূরের কথা এখনও কোন মামলার অগ্রগতি নেই। শুনেছি নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আসে আবার চেঞ্জ হয়। এভাবেই চলছে মামলাটি। কবে নাগাদ শেষ হবে তদন্ত আর কবে বিচার পাবো। বিচারের আশা করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছি। হতাশ হয়ে যাচ্ছি। হতাশা ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছি না। তবু আশা ছাড়ছি না। আশা করি একদিন ন্যায়বিচার পাবো। তদন্ত সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সিটিটিসির পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সোহরাব হোসেন বলেছেন, গোপীবাগ ৬ মার্ডারের মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। এখনও খুনের আসল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।