কলকাতার রিকশাচালক, ছবি: সংগৃহীত
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কলিকাতা প্রতিনিধি, রোববার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ || অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩১ :
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নাক গলানোকে ভালোভাবে নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। এমন অবস্থায় ইউনূস সরকার এর কড়া প্রতিবাদও জানায়। ফলে বাংলাদেশিদের ওপরে ভিসা সীমিত করে ভারত। এতে করে উল্টো বিপত্তি দেখা দিয়েছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে।
Advertisement
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে উত্তেজনাকর সম্পর্কের ফলে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ খ্যাত মার্কুইস স্ট্রিটের ৮০ জন রিকশাচালকের জীবন-জীবিকার ওপর ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ এসব রিকশাচালকরা বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর ভরসা করে মার্কুইস স্ট্রিটে হাতে টানা রিকশা চালিয়ে থাকেন। কিন্তু ভারত ভিসা নীতি সীমিত করার কারণে গত তিন মাস ধরে বাংলাদেশি পর্যটকদের দেখা না মেলায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে রিকশাচালকদের ওপর, যাদের জীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রিকশাচালকরা বাংলাদেশি পর্যটকদের পরিবহন করে থাকেন। বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গত তিন মাসে ওই রিকশাচালকদের উপার্জন প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে অনেকে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঢুকে পড়েছেন। অনেকেই কার্গো লোডিংয়ের কাজে যুক্ত হয়েছেন।
কয়েক মাস আগেও কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশের’ মারকুইস স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এবং সদর স্ট্রিটে বাংলাদেশি পর্যটকদের বড় বড় শপিং ব্যাগ নিয়ে রিকশায় করে যাতায়াতের দৃশ্য একেবারে সাধারণ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিসা সীমিত করেছে ভারত। যে কারণে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কিছুসংখ্যক মানুষ কেবল চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যাচ্ছেন।
কলকাতার সোদিপুরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ সাহা প্রায় এক দশক ধরে মিনি বাংলাদেশে রিকশাচালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সারা বছরই বাংলাদেশি পর্যটকদের ফেরি করি। ঈদ, দুর্গাপূজা এবং বিয়ের মৌসুমের আগে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বেড়ে যায়। কিন্তু গত তিন-চার মাসে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে।’
Advertisement
ক্যানিংয়ের বাসিন্দা রিকশাচালক মো. রফিক বলেন, ‘গত চার মাস আগে প্রত্যেকদিন ৭০০ থেকে ৮০০ রুপি উপার্জন করতাম। কিন্তু এখন তা নেমে দিনে ২০০ রুপিতে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশিদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন ২০০ থেকে ২৫০ রুপি উপার্জন করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ চিকিৎসার জন্য যারা আসেন, তারা সাধারণত কেনাকাটা করেন না কিংবা মজা করার জন্যও রিকশায় উঠেন না।’
এমন করুণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে রিকশাচালক মো. সাজ্জাকের মতো অনেকেই এখন এই পেশা ছেড়ে অন্য কাজ করছেন। সাজ্জাক ছয় বছর ধরে রিকশাচালক হিসেবে কাজ করলেও এখন খাদ্যদ্রব্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেছেন।