ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিনিধি , বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ || অগ্রহায়ণ ২৬ ১৪৩১ :
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরব, আমাদের অহংকার। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ দিয়েছেন। আমরা তাঁদের শ্রদ্ধা করি। অনেকে মরতে মরতে বেঁচে এসেছেন।
Advertisement
জাতি আজ সেই জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও সম্মানিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রশ্নহীন পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে পারিনি। তালিকা করার নামে অতীতে এমন সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে, যেগুলোর সঠিকতা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিবারই অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর অভিযোগ এসেছে।
অন্যদিকে প্রকৃত অনেক মুক্তিযোদ্ধা রাজনৈতিক বা অন্যান্য কারণে তালিকাভুক্ত হতে পারেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার অপপ্রয়োগের অভিযোগও কম নয়। এসব কারণে তালিকা সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, গত ১৫ বছরে যাঁরা গেজেটভুক্ত হয়েছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করা হবে।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মন্ত্রী, আমলা, দলীয় নেতাকর্মীসহ এমন অনেকে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যাঁদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন রয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭৫তম সভায় সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তাঁর জন্ম ১৯৬২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তাঁর বয়স ছিল ১০ বছরের কম। অথচ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ন্যূনতম বয়স হতে হয় সাড়ে ১২ বছর।
Advertisement
তাহলে তিনি কিভাবে তালিকাভুক্ত হন? জামুকার ৭২তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের নামে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট জারি হয়। তাঁর স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় জামুকা এ বিষয়ে সেনা সদরের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
জামুকার একজন সাবেক সদস্য নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাঁর বিষয়ে আপত্তি দিলেও অন্য সদস্যরা সেটি আমলে নেননি। অথচ ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের ২৩ পাঞ্জাব ব্যাটালিয়ন ভারতীয় সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ওই ব্যাটালিয়নে ফারুক খান ছিলেন। ভারতীয় সেনারা ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে দিল্লি পাঠান। সে সময় বাঙালি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তিনি রক্ষা পান। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে ফারুককে কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশনার হোসেন আলীর দপ্তরে পাঠানো হয়। এরপর ১৪ জানুয়ারি বেনাপোল বন্দর দিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। তাহলে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করলেন কখন?’ এ রকম অভিযোগ রয়েছে আরো অনেকের বিরুদ্ধে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক বলেছেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের ত্যাগকে মূল্যায়ন করতে হলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় সংস্কার প্রয়োজন।’ কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী।
Advertisement
আমরাও চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা হোক। জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের দ্বিধাহীনভাবে সম্মানিত করার সুযোগ পাক।