‘ভিডিও কল দিলে ধরো না কেন, ফেল করাই দিমু’ (ভিডিও)

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন  ২৫ ১৪৩১ :

যৌন হয়রানি, রেজাল্ট সিন্ডিকেট, মানসিক নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তার স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে উপাচার্য বরাবর দরখাস্ত দিয়েছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের গভীর রাতে ভিডিও কল ও অশোভন মেসেজ দেওয়ার তথ্য মিলেছে।

Advertisement

অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কারুশিল্প ডিসিপ্লিনে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে প্রত্যেক ব্যাচের ব্যবহারিক ক্লাস ও মার্কিংয়ের দায়িত্ব একাই পালন করেন শিক্ষক মনির। ফলে বিভাগে তিনি একনায়কতন্ত্র কায়েম করে শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর হুমকি দিয়ে থাকেন। এমনকি ক্লাসেও একাধিক ছাত্রীর শরীরে হাত দেন। অপ্রয়োজনে রাত-বিরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও কল দেন। অশ্লীল ভাষায় মেসেজ পাঠান।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, শারীরিক গঠন নিয়েও অশালীন মন্তব্য করে বিবাহিত ছাত্রীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ ও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের বিস্তারিত জানতে চান। কোনো শিক্ষার্থী সাহায্যের জন্য গেলে তাকে নানাভাবে অপদস্থ করেন। পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে একাধিক ছাত্রীকে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

ভুক্তভোগী ছাত্রীদের কাছে মনির উদ্দিনের পাঠানো মেসেজ ও ভিডিও কলের তথ্যে দেখা যায়, ২০ জানুয়ারি তিনি এক ছাত্রীকে মেসেঞ্জারে একটি অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে লিখেছেন, ‘এক্সট্রা ক্লাস চলিতাছে, বালা না?।’ ২০২০ সালের ৯ জুলাই আরেক ছাত্রীকে লিখেছিলেন, ‘রাত কিন্তু ৩টা ৫৪ বাজে, আমি করি চৌকিদার, আপনি কই?।’ আরেক ছাত্রীকে লেখেন, ‘ঘুম নেই, একদম ফেইল করাই দিমু।’

২০২৩ সালের জানুয়ারির এক রাতে আরেক ছাত্রীকে একটি অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে বলেন, ‘এটা কি তুমি?।’ রাত ২টা ৪৮ মিনিটে ‘লুচ্চা মেয়েদের নাম’ শিরোনামে একটা অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে ভিডিওতে থাকা নামের সঙ্গে মিল আছে—এমন এক ছাত্রীকে লিখেছেন, ‘আমি বলি নাই, দুনিয়া বলিতেছে, আমি কী করুম?’

আরেক ছাত্রীকে একটি অশালীন ভিডিও পাঠিয়ে লিখেছেন, ‘সুন্দর না? অনেকদিন পর দেখলাম।’ মেয়েটি কোনো সাড়া না দিলে তিনি আবার লিখেছেন, ‘কিছুই কি বলবা না?।’ আরেক ছাত্রীকে হুমকি দিয়ে লেখেন, ‘ওই তোমার ফোনে ভিডিও কল দিলে ধরো না কেন? একবারে ফেল করাই দিমু।’

Advertisement

ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, প্রথম বর্ষে যখন ভর্তি হই, তখনই তার (মনির উদ্দিন) টার্গেটে পড়ি। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাকে ফোন করে ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন। অন্তর্বাস নিয়ে প্রতিদিন কথা বলতেন। জ্বর দেখার নাম করে হাতে, কপালে, মুখে, গলায় হাত দিতেন। কারোর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত কি না, সে বিষয়ে জানতে চেয়ে বিরক্ত করতেন। তার কঠিন শাস্তি চাই।

ছাত্রীদের অন্তর্বাস নিয়ে মনির উদ্দিনের বাজে মন্তব্যের বিষয়ে আরেক ছাত্রী অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ড. মনির উদ্দিনকে একাধিকবার তার ব্যবহৃত কয়েকটি ফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর আমার কাছে ড. মনির উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অনেক বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দেয়। তার বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করে। বিভাগের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জরুরি মিটিংয়ে তাকে বিভাগের সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।

Advertisement

প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, আমরা অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছি। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।