নদী কমিশন চেয়ারম্যান বললেন বালু সন্ত্রাসীদের সহায়তা করেন চাঁদপুরের নারী মন্ত্রী

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩ : জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, নদী দখলদারদের পেছনে রাজনৈতিক শক্তি আছে। মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছেন, সেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে।

Advertisement

গতকাল রোববার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের নদ-নদী: সংজ্ঞা ও সংখ্যাবিষয়ক সেমিনার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সভাপতির বক্তব্যে মনজুর আহমেদ বলেন, মেঘনা থেকে এক ব্যক্তি ৬৬৮ কোটি সিএফটি বালু চুরি করেছেন। ওই বালুর আর্থিক মূল্য ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাঁকে ২৬৭ কোটি টাকা রয়্যালটি
দেওয়ার কথা বলে তাঁর চুরিকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হায়েনারা দল বেঁধে মেঘনায় হামলে পড়েছে। মেঘনা থেকে আবার বালু তোলার চেষ্টা চলছে। নতুন করে আরেকটি বালুমহাল ঘোষণা করা হয়েছে বলে চিঠি পেয়েছি। এখানে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হবে। এতে নদীর ক্ষতি হবে, মাছের ক্ষতি হবে, পরিবেশের ক্ষতি হবে। এদের থেকে নদীকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। কারও নাম উল্লেখ না করে মনজুর আহমেদ বলেন, চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রীর সঙ্গে এদের সম্পর্ক আছে।

তিনি বলেন, গত বছর তারা চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে গিয়ে একজন বালু সন্ত্রাসীকে পেয়েছেন। সেই বালু সন্ত্রাসীকে তারা ৩০০ ড্রেজারসহ উৎখাত করেছেন। তখন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান, এডিসি দাউদ হায়দার চৌধুরী, প্রখ্যাত ইলিশ গবেষক ড. হারুন সহায়তা করেছেন। তাদের সবাইকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। দাউদ হায়দারকে পার্বত্য অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। তাঁকে প্রমোশন বঞ্চিত করা হয়েছে। ড. হারুন প্রখ্যাত ইলিশ গবেষক, অথচ তাঁকে বাগেরহাটে চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রের সম্পত্তি উদ্ধার করতে যান, তখন তাদের পুরস্কারের পরিবর্তে তিরস্কার করা হয়। মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের একজন নারী এসিল্যান্ডকে বালুর ড্রেজার জব্দ করার কারণে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। বালুখেকোরা এত বড় প্রভাবশালী, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয় না।

Advertisement

মনজুর আহমেদ বলেন, ‘মেঘনায় আবার বালুদস্যুরা ফিরে এসেছে। এখানে শত শত ড্রেজারের আওয়াজে প্রাণ-প্রকৃতি বিপন্ন। এ হায়নার দল থেকে আমি নদীকে মুক্ত রাখতে পারছি না। কারণ এ হায়েনার দলের পেছেন আছে রাজনৈতিক শক্তি। চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রী তাদের সহায়তা করে। এটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’

তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘নদী কমিশন নদীর অভিভাবক। কিন্তু অভিভাবকের যে হাত-পা কেটে ফেলেছেু এটা জনগণ জানে না। আমাদের কোনো টাকা-পয়সা দেওয়া হয় না। আমি ২০ জন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি, দেয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর নদী রক্ষায় কোনো কাজ করছে না। শীতকালে ঢাকার নদীগুলো বিষের নহর হয়ে যায়। পদ্মা নদীতে হরিরামপুরে তিনটি বালু সন্ত্রাসী গ্রুপ পদ্মা নদী খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে। সেখানে খুনোখুনি হচ্ছে। সাহসী কর্মকর্তাদের হাইজ্যাক করা হচ্ছে। নৌ পুলিশের ওসিকে তুলে নিয়ে গেছে।’

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীকে টুকরো টুকরো করে লিজের নামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা পরিষদ জড়িত। সর্বশেষ হরিলুটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) পুরো নদীর ওপর চট্টগ্রামে একটি অর্থনৈতিক জোন করেছে, তারা নদী লিজ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসককে দুইবার লিখিত নির্দেশ দিয়েছিলাম।

কিন্তু তারা বলেছে, এটা নদীর জমি নয়। দখলদারের পক্ষে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তি কাজ করছে। কিছু কিছু এনজিও কর্মীও দখলদারের পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। আমাদের পাশে কেউ নেই। আমাদের দক্ষ জনবলকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা নদনদীর পক্ষে শক্ত অবস্থানে ছিলেন।’

Advertisement