ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি, শনিবার , ২৭ আগস্ট ২০২২ : প্রতারক চক্রটি বন্ধুত্বের আড়ালে টার্গেট ব্যক্তিকে বাসা কিংবা হোটেলে ডেকে নিয়ে জবরদস্তি বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করত। পরে এই ভিডিও দেখিয়ে করা হতো ব্ল্যাকমেইল। এভাবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা।
ধনাঢ্য ও কর্পোরেট ব্যক্তিদের টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেয়েদের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হতো। এরপর বন্ধুত্বের আড়ালে বাসায় কিংবা হোটেলে ডেকে নিয়ে তাদেরকে জবরদস্তি বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা হতো। পরে এই ভিডিও দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে করা হতো ব্ল্যাকমেইল। এভাবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা।
ভুক্তভোগীদের একজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ভোরে র্যাব-১ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখান থেকে দুই নারীসহ চক্রের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আল মাহমুদ ওরফে মামুন, আকরাম হোসেন ওরফে আকিব, মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া, তানিয়া আক্তার, রুবেল, মহসীন ও ইমরান। এ সময় তাদের কাছ থেকে অশ্লীল ছবি ও গোপন ভিডিও ধারণ কাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল ফোন ও ২টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি জানান, ভুক্তভোগীদের একজন র্যাব-১ এ অভিযোগ করেন- ২২ জুলাই ফেসবুকের মাধ্যমে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। এই নারী ১০ আগস্ট ভিকটিমকে কৌশলে রাজধানীর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যান।
ওই বাসায় একটি কক্ষে নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রিয়া ও তার সহযোগীরা জোরপূর্বক ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে ওই অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ১ লাখ টাকা ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা জোর করে আদায় করে এই চক্র।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী কোথাও কোনো অভিযোগ না করে নীরব থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর আবারও ২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। দাবি করা দুই লাখ টাকা না দিলে ধারণকৃত অশ্লীল ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়।
‘এ পর্যায়ে ভুক্তভোগী র্যাব-১ এ লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহায়তা চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটির হোতা আল মাহমুদ ওরফে মামুন। তার নারী সহযোগী তানিয়া আক্তার ও মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া। এদের মধ্যে তানিয়া আল মাহমুদের স্ত্রী। মূলত তারাই পরিকল্পিতভাবে এই চক্র সাজিয়েছে। আর প্রিয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
‘চক্রটি গত দুই বছরে ৫০ জনের বেশি মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। আর এভাবে অর্থ কামিয়ে চক্রের সদস্যরা রাজধানীতে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আসছিল।’