ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),পলাশবাড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি,০৭ ডিসেম্বর : কর্মকর্তাদের সময় মতো অফিস না করার কথা ‘সময় সংবাদ’ এর দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছিলেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ি শিক্ষা অফিসারের অফিস সহকারী নুরবানু। ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং নুরবানুকেই শোকজ দেওয়া হয়, কেন তিনি অনিয়মের কথা প্রকাশ করলেন!
ঘটনার শুরু গত ২২ নভেম্বর। ওইদিন পলাশবাড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে সকাল সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত অনুপস্থিত পাওয়া যায় শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস ছালাম, হিসাব রক্ষক আব্বাছ আলীসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
পরে অফিসে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে সময় সংবাদের প্রতিবেদকের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম। এ নিয়ে ওই দিনই সময় সংবাদে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার হয়। প্রতিবেদনে শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী নুরবানুর সাক্ষাৎকার প্রচার হয়।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হিসাব রক্ষক আব্বাছ আলী ১১টার আগে অফিসে আসেন না।
অনিয়মের তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় রোষাণলে পড়তে হয় তাকে। সময় সংবাদে সাক্ষাৎকার দেওয়ার অভিযোগে গত ২ ডিসেম্বর অফিস সহকারী নুরবানুকে শোকজ করে পত্র দেন জেলা শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী। অথচ সময় সংবাদের প্রতিবেদকের সাথে অশোভন আচরণ, অফিসে হিসাব রক্ষক ও শিক্ষা অফিসারের অনুপস্থিতির বিষয়ে খবর প্রচার হলেও তাদের বিরুদ্ধে ওই সময় কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি।
গাইবান্ধা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম বলেন, যারা অফিসে অনুপস্থিত থেকে সরকারি নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াটা জেলা শিক্ষা অফিসারের প্রথম অপরাধ। আবার টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় নিরপরাধ অফিস সহকারীকে শোকজ করে তিনি দ্বিতীয় অপরাধ করেছেন। অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে দেওয়া শোকজ নোটিশ প্রত্যাহার করে অভিযুক্ত হিসাব রক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার হোসেন আলী বলেন, পলাশবাড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষক আব্বাছ আলী তার কাছে অভিযোগ করেন, অফিস সহকারী নুরবানু সময় সংবাদে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তাই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও হিসাব রক্ষক সময় মতো অফিস না করার ব্যাপারে সময় সংবাদে খবর প্রচারের পরও কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে হোসেন আলী বলেন, সময় সংবাদে খবর প্রচারের বিষয়টি তিনি জানেন না।
তবে জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে সময় সংবাদের সাক্ষাতের পর রাতে সময় মতো অফিস না করায় অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকেও শোকজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অফিসে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও সময় সংবাদের প্রতিবেদক পলাশবাড়ি উপজেলা পরিষদে গিয়ে রোববার (২২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে দশটার পরও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও হিসাব রক্ষকের আসন ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখেন। উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সমবায়, সমাজসেবা, পাট অধিদফতর, মৎস্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দফতরেও ছিল একই চিত্র।
দিনাজপুর থেকে অফিস করায় বেলা ১১টার পরও সাক্ষাৎ মেলেনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের। এসময় সেবা প্রত্যাশীদের বিভিন্ন দপ্তরের সামনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
সময় সংবাদের উপস্থিতি জানতে পেরে নিজ কার্যালয়ে না গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলা পৌনে ১২টার দিকে অফিসার্স ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে গিয়ে তার কাছে দেরিতে আসার কারণ জানতে চান সময় সংবাদের প্রতিবেদক। এসময় সময় সংবাদের মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সময় সংবাদে খবর প্রচার হওয়ার পরদিন ২৩ নভেম্বর যথা সময়ে অফিস না করার অভিযোগে অভিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সময় মতো (সকাল ৯-৫টা) অফিসে উপস্থিত ও প্রস্থানের পাশাপাশি মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার মেইনটেইনের জন্য নির্দেশনা জারি করেন।