ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,২৬ মার্চ : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় লকডাউনে প্রায় গোটা বিশ্ব। বিশ্বেব অনেক দেশের মতো এশিয়ার দেশ ভারতও লকডাউনে গেছে। করোনার বিস্তার রোধে টানা ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে পুরো ভারতে।
এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশটির জনগণের জীবনযাপনে ব্যাপক প্রভাপ পড়তে শুরু করেছে। লকডাউনের কারণে অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। এমনই এক সংকটে পড়ে পুলিশভ্যানেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক নারী। খবর আনন্দবাজারের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল থেকেই স্ত্রী জ্যোতিদেবী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন। স্ত্রীকে নিয়ে কীভাবে হাসপাতাল যাবেন, কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছিলেন না সুরেন্দ্র গুপ্ত। কয়েকদিন ঘরে বসে থাকার কারণে হাতে টাকাপয়সা প্রায় নেই বললেই চলে। তার উপর করোনা আতঙ্কের মধ্যে কারো সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই তেমন। ট্রেন বন্ধ, প্রাইভেট গাড়িতে করে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সাধ্য নেই। সকাল থেকে তিনি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য পায়ে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি। শেষমেশ সোনারপুর স্টেশনের কাছে গিয়ে এক প্রকার হতাশ হয়ে বড় রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় সুকান্ত সরণির বাসিন্দা সুরেন্দ্র।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বন্ধ স্টেশন এলাকার ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন সোনারপুর থানার আইসি সঞ্জীব চক্রবর্তী। হতাশ এবং উদভ্রান্ত সুরেন্দ্রকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি গাড়ি থামান। জানতে চান কী হয়েছে? সুরেন্দ্র তখন তাকে ঘটনা খুলে বলেন।
এরপর সঞ্জীব নিজের গাড়িতে তুলে নেন সুরেন্দ্রকে। চলে যান সুকান্ত সরণিতে সুরেন্দ্রর বাড়িতে। কাতরাতে থাকা সুরেন্দ্রর স্ত্রীকে তার দুই প্রতিবেশীর সাহায্যে নিজের গাড়িতে তোলেন আইসি। রওনা দেন সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালের উদ্দেশে। কিন্তু, মাঝপথে গাড়িতেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন জ্যোতিদেবী।
সঞ্জীব জানিয়েছেন, মা এবং সদ্যোজাত দু’জনেই হাসপাতালে ভর্তি, তবে সুস্থ আছেন।
মেয়ে হওয়ায় খুশি সুরেন্দ্র। প্রশংসা করলেন পুলিশের।
তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে কোনও কাজ নেই। বাড়িতেই বসে। টাকাপয়সাও নেই। সকাল থেকে আমার স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। অ্যাম্বুলেন্স পাইনি। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনই দেবদূতের মতো হাজির হয়েছিলেন ওই অফিসার। উনাকে অনেক ধন্যবাদ। উনি না থাকলে আজ যে কী হত! চির দিন তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
সঞ্জীব বলেন, পুলিশও তো মানুষ। ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছিলাম, পেশায় তিনি হকার। ডান হাতটা নেই। শিয়ালদহ স্টেশনে চানাচুর বিক্রির কাজ করেন। গত কয়েকদিন ধরে ট্রেন বন্ধ। তাই কাজও বন্ধ। কাছে টাকা নেই। অথচ স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠেছে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কথাগুলো শুনেই গিয়েছিলাম তার বাড়ি।
পাশাপাশি সোনারপুর হাসপাতালেও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে রেখেছিলেন সঞ্জীব। তিনি বলেন, হাসপাতালে ডাক্তাররা তৈরিই ছিলেন। কিন্তু আমার গাড়িতেই প্রসব হয়ে যায়। ওই অবস্থাতেই জ্যোতিদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দু’জনেই ভাল আছে।