ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,ষ্টাফ রিপোর্টার,০২ মার্চ : কম্পিউটার প্রকৌশল বিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করে ঢাকা হেমায়েতপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন মেহেদী হাসান। সেখানে বছর খানেক চাকরি করে একটি প্রতিষ্ঠানে ডেভেলপার হিসাবে যোগদান করেন। এরপর সেই চাকরি ছেড়ে গাড়লের খামার করে মেহেদী এখন স্বাবলম্বী।
যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার শিকড়ী গ্রামের ছেলে মেহেদী হাসান।
নিজ গ্রামে এসে বিদেশী প্রজাতির গাড়ল চাষ শুরু করেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে দুইটি গাড়লের বাচ্চা ক্রয় করেন ১৫ হাজার টাকায়। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি আরও ৫০টি দেশী ক্রস গাড়ল ক্রয় করেন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৭০টি গাড়ল। মেহেদীর প্রথম কেনা একটি গাড়ল ৪ মাস পালনের পর ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
গাড়ল আসলে কি?
গাড়ল বলতে সাধারণত লেজ লম্বা, আকারে বড় ভেড়াগুলোকে বোঝায়। প্রকৃত অর্থে গাড়ল মূলত সুন্দরবন অঞ্চলের একটি স্বীকৃত ভেড়ার জাত। এগুলো দেখতে আমাদের দেশী ভেড়ার মত এবং আকারে দেশী ভেড়ার থেকে কিছুটা বড়। এগুলো নোনা পানির অঞ্চলে সহজে মানিয়ে নেয় এবং খুব শক্ত প্রকৃতির। আর লেজ লম্বা আকারে বড় ভেড়াগুলো আসলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগপুর অঞ্চলের ছোটানাগপুরি জাতের ভেড়ার সাথে আমাদের দেশী ভেড়ার ক্রস ব্রীড। এই ক্রস ব্রীডের নামকরণ করা হয় ‘গাড়ল’। ভাল যত্ম পেলে পিওর গাড়ল ৭-৮ মাস পর পর একটি করে বাচ্চা দেয়।
রাজশাহী অঞ্চলের খামারিরা প্রথম এই সংকরায়ন ঘটালেও মেহেরপুর কুষ্টিয়া অঞ্চলে এর ব্যাপকতা দেখা যায়। তাছাড়া বাণিজ্যিক ভাবে দেশের বিভিন্ন জেলাতে ছোট বড় কিছু কিছু গাড়লের খামার গড়ে উঠছে।
মেহেদী জানান, গাড়ল লালন-পালন অত্যন্ত সহজ। এরা যে কোন পরিবেশে জীবন-যাপন করতে পারে। রোগব্যাধি অত্যান্ত কম। বাজারে গাড়লের চাহিদাও অনেক বেশী। একটি ৩-৪ মাস বয়সী গাড়লের দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। একটি পূর্ণবয়স্ক গাড়ল ৬০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। গাড়লের মাংসের দাম প্রতি কেজি ৮শ থেকে এক হাজার টাকা। প্রতি ছয় মাস পর পর মা গাড়লের বাচ্চা হয়। কোন গাড়ল দুইটি, কোনটি তিনটি আবার কেউ চারটি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে।
মেহেদী আরও জানান, আগামী এক বছরে তার খামারে দুই থেকে তিনশ গাড়ল উৎপাদন হবে। তার খামারে তিনি এবং তার বাড়ির লোক বাদে বেতনভুক্ত দুইজন লোক কাজ করে থাকে। গাড়লের সংখ্যা বেশী হলে লোকবলও বৃদ্ধি করা হবে। যারা শিক্ষিত হয়ে চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছে তারা সহজে গাড়লের খামার করে স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জয়দেব কুমার সিংহ জানান, যশোরের শার্শা ও বেনাপোলে গাড়ল খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আর এই পুষ্টির উৎস হিসেবে গাড়লের গুরুত্ব গরু ও ছাগলের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাড়লের ৩০ থেকে ৬০ কেজি ওজন হওয়ায় এটি অত্যন্ত লাভজনক। এ কারণে গাড়ল খামারের প্রতি আরও অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন।
বাণিজ্যিক ও পারিবারিকভাবে গাড়ল খামার হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এখান থেকে গাড়লের বাচ্চা সংগ্রহ করছেন। দিন দিন এর প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি কেউ গাড়ল খামার করতে চায় তাহলে তাদের কারিগরী সুযোগ-সুবিধা ও পরামর্শ দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।