ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,মহাদেবপুর প্রতিনিধি,১৬ ফেব্রুয়ারি : কোকো ডাস্ট এবং প্লাস্টিক ট্রে ব্যবহারের মাধ্যমে মাটি ছাড়াই আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের সবজির চারা উৎপাদন করছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের বালুকাপাড়া এলাকার সরদার ফারমার্স হাব সবজি নার্সারির পরিচালক এসএম এমরান আলী। মাটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কোকো ডাস্ট (নারিকেলের ছোবড়ার ধুলা)। নেট হাউজের ভিতরে চারা উৎপাদন করায় মাটি ও বায়ুবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে এসব চারা। আর আধুনিক এ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন সবজি চাষিদের কাছে হতে পারে নতুন দিগন্ত। মহাদেবপুর সদর ইউনিয়নের শালগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা এসএম এমরান আলী। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও কৃষির উৎপাদন নিয়ে ভাবতেন সব সময়। কীভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের সুস্থ-সবল সবজির চারা উৎপাদন করে সুলভমূল্যে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। এক সময় সেই পদ্ধতিও তিনি পেয়ে যান। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রযুক্তি সহায়তায় নানা পরিকল্পনা প্রয়োগ করেন কৃষিতে। এরপর শুরু করেন আধুনিক পদ্ধতিতে সবজির চারা উৎপাদন। কৃষিভিত্তিক এনজিও এবং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে বর্তমানে তিনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে।
জানা যায়, কোকো ডাস্ট ব্যবহার করে কেঁচো সারের সমন্বয়ে মাটি ছাড়াই সবজির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে প্লাস্টিক ‘ট্রে’ তে। এ প্রযুক্তিতে চারা পুরো শিকর পেঁচিয়ে নেয়; এতে শিকড়ের কোনো ক্ষতি হয় না। এই চারা জমিতে লাগানোর পরপরই খাদ্য গ্রহণ শুরু করে। আধুনিক এ পদ্ধতিতে তৈরি হাউজের চারপাশে নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ নিশ্চিত হয় এবং ক্ষতিকারক পোকামাকড় থেকে সবজির চারাগুলো রক্ষা পায়। তাপ নিয়ন্ত্রণ ও ঝড়-বৃষ্টি থেকে চারাগুলো নিরাপদে রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ পলিথিন। এসএম এমরান আলী বলেন, মাটিতে চারা উৎপাদন করলে আবহাওয়ার কারণে চারা উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটত। গত বছরের নভেম্বরে সিনজেনটা ফাউন্ডেশনের ‘ফারমার্স হাব’-এর সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে দুই শতক জমিতে সবজি নার্সারি গড়ে তুলি। আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে গ্রিন হাউজের আদলে তৈরি করি নেট হাউজ। এতে অল্প খরচে পেঁপে, করলা, চাল কুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, টমেটো, লাউসহ বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। এ ছাড়াও গোলাপ, গাঁধা, অর্কিড, অ্যান্ধরিয়াম, চন্দ্র মল্লিকা ফুলের চারাও উৎপাদন করা যায়। তিনি আরও বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে একই জমিতে বার বার চারা উৎপাদন করায় জমিগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। উৎপাদিত চারা আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। এতে লোকসান গুনতে হয় নার্সারি মালিকদের। সবজি উৎপাদনেও ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। অন্যদিকে আধুনিক এ পদ্ধতিতে অল্প খরচে সুস্থ-সবল চারা উৎপাদন করা যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, আধুনিক এ প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে সবজি চাষিরা দারুণভাবে লাভবান হবেন। অপরদিকে মাটির উর্বরতা হ্রাস এবং রোগ বালাইয়ের কারণে সবজি উৎপাদনে যে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে তা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।