ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,বগুড়া প্রতিনিধি,১৯ আগস্ট : বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষণ ও মা-মেয়ের মাথা মুড়িয়ে নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের জেল জীবন কাটছে রাজকীয় স্টাইলে। অসুস্থ না হয়েও থাকছেন বগুড়ার কারা হাসপাতালে। খাচ্ছেন বাড়ির রান্না করা খাবার। বাইরে থেকে নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে তাকে মাদক দ্রব্যও। দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডায়ও মেতে উঠছেন বগুড়ার আলোচিত কোটিপতি তুফান। দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য নির্দিষ্ট ছোট্ট জানালার ফাঁক দিয়ে যখন ইচ্ছে পাইপে সেবন করছেন ফেনসিডিলও। নির্জন স্থান হিসেবে পরিচিত কারাগারের দক্ষিণে মেডিকেলের পাশ দিয়ে তুফানের জন্য প্রাচীরের ওপর দিয়ে ছুরে মারা হচ্ছে ফেনসিডিলের বোতল। সঙ্গে সঙ্গে তুফানি শক্তির বলে তা পৌঁছে যাচ্ছে তুফানের কাছে। সম্প্রতি কারামুক্ত একাধিক কয়েদি ও বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
এমনকি কারাগারের ভেতরে ধর্ষিতা কিশোরী ছাত্রীর সঙ্গে তুফানের সাক্ষাতের ঘটনা ঘটেছে বলেও শোনা যাচ্ছে। তবে জেল সুপার ধর্ষিতা কিশোরী ছাত্রীর সঙ্গে তুফানের দেখা সাক্ষাতের বিষয়টি দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেন। সম্প্রতি কারামুক্ত এক হাজতি জানান, তুফান জেলের ভেতরে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, তার সঙ্গে কিশোরী ছাত্রীর দেখা হয়েছে। বিয়ের শর্তে সে মামলা তুলে নিতেও রাজি হয়েছে।
জানতে চাইলে বগুড়ার জেল সুপার মোকাম্মেল হক বলেছেন, দর্শনার্থী কক্ষে পাইপ দিয়ে তুফানকে ফেনসিডিল খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তুফানের জন্য প্রাচীর টপকে ফেনসিডিল ভেতরে নিক্ষেপের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। বলেন, তুফানের জন্য ফেনসিডিল নিক্ষেপের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এসব ঘটনায় মাদক মামলার আসামি বাবুলকে সাজা দেয়ার কথা জানা গেছে। সাজা হিসেবে বাবুলকে ওয়ার্ড থেকে সেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বগুড়া জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়া কয়েকজন হাজতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অঢেল সম্পদের মালিক তুফান, তার স্ত্রী আশা ও তার বোন রুমকি জেলে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছেন। তাদের সেবায় একাধিক লোক নিয়োগ করা হয়েছে। জেলে যাওয়ার পর ২-৪ দিন তারা জেলের খাবার খেলেও পরে বাড়ির রান্না করা খাবারই যাচ্ছেন জেলখানায়। হাজতি বা কয়েদির সঙ্গে সাক্ষাতে দর্শণার্থীদের জন্য ২০ মিনিট বরাদ্দ থাকলেও তুফানদের বেলায় তা তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। কারারক্ষীদের সহযোগিতায় তুফানদের স্বজনদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। আর এই সুযোগেই দর্শনার্থী কক্ষে স্যালাইনের পাইপের মাধ্যমে তুফানকে ফেনসিডিল খাওয়ানো হচ্ছে।
এক নারী রক্ষীসহ তিন কারারক্ষীর উপস্থিতিতেই গত ১২ আগস্ট এক দর্শনার্থী তুফানের এই কাণ্ড দেখে অবাক হন এবং জেল সুপারের কাছে অভিযোগ করেন। পরে কড়াকড়ি আরোপ করা হলে প্রাচীরের ওপর দিয়ে ফেনসিডিলের বোতল নিক্ষেপ শুরু হয়। সেটিও পরে ধরা পড়ে যায়। সর্বশেষ ১৬ আগস্ট বিকালে ফেনসিডিল নিয়ে ধরা পড়ে বাবুল নামের ওই হাজতি। অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে কারারক্ষীরা তুফানকে সহযোগিতা দিয়ে আসলে বকশিসে কমবেশি হওয়ায় বাবুলকে একটি পক্ষ হাতেনাতে ধরিয়ে দেয়।
একটি সূত্র জানায়, গত ৭ জুলাই ধর্ষিতা ছাত্রী ও তার মা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের সেফ হোম ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। সন্ধ্যার দিকে তাদের জেলখানায় পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টা তারা জেলে থাকেন। আর ওই সময়ই তুফানের সঙ্গে ওই ছাত্রীর সাক্ষাৎ হয়।
এ প্রসঙ্গে সদর থানার ওসি (তদন্ত) আসলাম আলী জানান, তিনি রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রী ও তার মাকে জেল থেকে বুঝে নিয়েছেন। রাতে ডিবি অফিসে রাখার পরদিন সকালে তাদের রাজশাহীতে নিয়ে যান।
হাজতি ও নির্ভরযোগ্য সূত্র বলেছে, জেলের নারী ওয়ার্ডে রয়েছেন কাউন্সিলর রুমকি, তার বোন আশা ও মা রুমি। তাদের দেখভালের জন্যই রওশন আরা ও আমেনাসহ তিন রক্ষী নিয়োজিত আছেন।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বিকালে ফোনে বগুড়া জেল সুপার মোকাম্মেল হক বলেন, ফেনসিডিল খাওয়ানোর চেষ্টার কথা জানার পর তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে কড়াকড়ি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বুধবার বিকালে প্রাচীর দিয়ে ফেনসিডিল ভেতরে নিক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শাস্তি হিসেবে শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার মাদক মামলার হাজতি বাবুলকে সেলে পাঠানো হয়েছে।
জেল সুপার বলেন, রাতে লকআপ থেকে কোনো হাজতি ও কয়েদিদের বের হওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমার (জেল সুপার) কক্ষে ভিকটিমের সঙ্গে তুফান সরকারের সাক্ষাতের অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ওই মামলার আসামিদের কেউ মেডিকেলে নেই। তারা সাধারণ বন্দির মতো রয়েছেন। তিনি মাদকাসক্ত তুফানকে ভালো থাকতে বেশি বেশি ঘুম, গোসল, আল্লাহকে ডাকা ও নামাজ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ভালো কলেজে ভর্তির নামে তুফান সরকার গত ১৭ জুলাইয়ের আগে পরে ওই ছাত্রীকে তার চকসুত্রাপুরের বাড়িতে ডেকে এনে ধর্ষণ করেন। পরে এ ঘটনার ধর্ষণ ও নির্যাতনের দুটি মামলা হয়। ওই মামলার আসামিদের প্রায় সবাই জেলে রয়েছে।
সূত্র:যুগান্তর