ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৬ আগস্ট : সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যে ক্ষমতা আছে সেটির প্রয়োগ করে সব দলের অংশগ্রহণে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে মত দিয়েছেন দেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। আজ বুধবার ইসির সঙ্গে সংলাপে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা এ মত দেন। সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে এ সংলাপ শুরু হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এতে সভাপতিত্ব করেন।
আজকের সংলাপে ২৬ জন গণমাধ্যম প্রতিনিধি অংশ নেন। বেলা সোয়া দশটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনকে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিসহ বিভিন্ন মত দিয়েছেন তারা। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে দুই ধরনের মতই এসেছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘ভারতের নির্বাচন কমিশনের তুলনায় আইনগত দিক থেকে আমাদের কমিশন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা বলেছি, আপনারা শুধু মেরুদণ্ড সোজা করলেই হবে না, আপনাদের প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে আপনাদের যে ক্ষমতা আছে সেটির প্রয়োগ করে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু কমিশন নির্বাচন আয়োজক সংস্থা সেহেতু সবার অংশগ্রহণের জন্য যে প্রক্রিয়া দরকার তাই করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সকল দলের অংশগ্রহণে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে নির্বাচন চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা, সিভিল সোসাইটির ভূমিকাসহ কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে কমিশনকে।’
নঈম নিজাম বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে সেনাবাহিনী প্রয়োজন তাহলে অবশ্যই সেনাবাহিনী ব্যবহার করবে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালীন যেসব সংস্থা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কাজ করে তাদের ভূমিকাটা কেমন হবে তা আমরা জানতে চেয়েছিলাম। এসব সংস্থাকে বলিষ্ঠভাবে আপনারা (ইসি) নিয়ন্ত্রণ করেন যেন জনগণ সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’
নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কমিশন নির্বাচনী ব্যয় বেঁধে দিলেও প্রার্থীরা তা মানেন না। কালো টাকা ব্যবহার রোধে ইসিকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘না ভোট বিষয়ে কমিশনকে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে আমার কাউকে ভালো লাগতে না পারে। এটা সাংবিধানিক অধিকার। তাই না ভোট থাকার প্রয়োজন আছে।’
প্রেসক্লাব সভাপতি শফিকুর রহমান জানান, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সমর্থন করেন না তিনি। সেই সঙ্গে নামসর্বস্ব পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে যেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেয়া হয়।
‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘নির্বাচন একটা রাজনৈতিক উৎসব। সব দলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে।’
বুলবুল জানান, সার্বিকভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই বলে অনেকে মত দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন এখন যেভাবে মোতায়েন করা হয় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা থাকতে পারে। কেউ কেউ বলেছেনে ‘নো’ ভোট না থাকা ভালো, কেউ কেউ বলেছেন ‘নো’ ভোট থাকতে পারে।
সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্ত নিশ্চিতে বিশেষ নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
শ্যামল বলেন, ‘এ নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে রয়েছে। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ইসির স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। এমন আচরণ করতে হবে যাতে জনগণের আস্থা তৈরি হয়। আস্থা অর্জনে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে।’
যেসব সুপারিশ এলো
ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বেলা আড়াইটায় সংলাপের বিষয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রাপ্ত সুপারিশ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো:
১. সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রত্যাশা করেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।
২. বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ করার পরামর্শ;
৩. সেনা মোতায়েনের পক্ষে বলেছেন কেউ কেউ; অধিকাংশই বলেছেন সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
৪. না ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে মত; কেউ ভালো বলেছেন, কেউ কেউ না ভোটের বিপক্ষে বলেছেন।
৫. দেশ-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৬. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় করার পরামর্শ;
৭. জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুননির্ধারণ করার পরামর্শ;
৮. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি;
৯. আচরণবিধি প্রয়োগে কঠোর হওয়ার পরামর্শ;
১০. প্রবাসীদের ভোটার ও ভোট দেয়ার ব্যবস্থা;
১১. নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ;
১২. ধর্মকে যেন কোনোভাবেই ভোটের প্রচারে ব্যবহার করতে না পারে;
১৩. অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ;
১৪. প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ ও প্রচারের উদ্যোগী হতে হবে;
১৫. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও কাউকে যেন ভোকেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে না হয়;
১৬. ইসিকে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে;
১৭. অনলাইনে মনোনয়ন নেয়ার সুযোগ দিতে হবে;
১৮. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে;
১৯. ভোটার ও প্রার্থীর আস্থা তৈরি করতে হবে;
২০. নারী ভোটার উপস্থিতি ও নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি ধরে রাখতে ভূমিকা নিতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, ‘এ সংলাপে ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার অনলাইন, টিভি ও রেডিও’র সঙ্গে বসবে ইসি। পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গে বসে সব সুপারিশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।’
এ সংলাপের মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।