ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,১৩ জুন : ফুটপাত দিয়ে যাতায়াত করছেন অজস্র মানুষ। দুপুরের ঠা ঠা রোদে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বসে রয়েছেন এক বৃদ্ধ। দীর্ঘক্ষণ, একই ভাবে। চোখ বোজা। ঘাড় সামান্য হেলে রয়েছে। সবাই তাকে দেখেছেন। কেউ কেউ থমকে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই!
ওই বৃদ্ধকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি কেউই। এমনকি ওই বৃদ্ধ যে ব্যস্ত রাস্তায় ওইভাবে পড়ে রয়েছেন, সেই খবর পৌঁছায়নি পুলিশের কানেও! তাই এগিয়ে আসেনি পুলিশের টহলদার গাড়ি বা হাওড়া সিটি পুলিশের ট্রুমা কেয়ার অ্যাম্বুলেন্সও। পুলিশ যতক্ষণে খবর পেল, ততক্ষণে তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। শেষমেশ বিনা চিকিৎসায়, সবার চোখের সামনেই মারা গেলেন অজ্ঞাতপরিচয় ওই বৃদ্ধ।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তীব্র গরমে সবাই যখন হাঁসফাঁস করছে, তখন হাওড়া ব্রিজের দিক থেকে হেঁটে বঙ্কিম সেতুর দিকে আসছিলেন ওই বৃদ্ধ। মাথায় কাঁচা-পাকা কোঁকড়ানো চুল। গালে কয়েক দিনের না-কামানো দাড়ি। গায়ে কালো স্ট্রাইপ দেয়া জামা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাওড়া ব্রিজ থেকে যে রাস্তাটি বঙ্কিম সেতুতে উঠে বাঁ দিকে ঘুরেছে, সেখানেই সেতুর রেলিংয়ে হেলান দিয়ে প্রথমে বসে পড়েন তিনি। ঘণ্টা দুয়েক ওইভাবে বসে থাকার পর শুয়ে পড়েন ফুটপাতেই। তার আশপাশ দিয়ে তখন যাতায়াত করছেন নিত্যযাত্রীরা। কেউ কেউ ভেবেছেন গরমের কারণে সাময়িক অসুস্থতার জন্য বৃদ্ধ ওইভাবে শুয়ে আছেন। তারা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু কেউ বৃদ্ধের মুখে সামান্য পানিটুকুও তুলে দেননি। খানিকক্ষণ থমকে দেখে আবার হেঁটে চলে গেছেন।
ওই ফুটপাতেই ডালা নিয়ে পেয়ারা বিক্রি করতে বসেছিলেন সাবিরুদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘ওই বৃদ্ধ যে অসুস্থ বুঝতে পারছিলাম। ওর মুখ দিয়ে গ্যাঁজলার মতো বেরোচ্ছিল। আমার গামছা দিয়ে মুখ মুছিয়ে গামছাটা কোমরে জড়িয়ে দিয়ে এসেছিলাম। আমি গরিব মানুষ বাবু, আর কী করতে পারি?’ সাবিরুদ্দিনের আফসোস, তখন বহু মানুষ ওই বৃদ্ধের পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়েছেন। তার কাছে যারা পেয়ারা কিনতে এসেছিলেন, তাদেরও কয়েকজনকে তিনি সাহায্য করতে বলেছিলেন। কিন্তু কেউই কিছু করেননি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে থানার একটি টহলদারি ভ্যান আসে। ওই ভ্যানের পুলিশ কর্মীরাই জানিয়ে দেন, ওই বৃদ্ধ মারা গিয়েছেন। তাই ডাক্তার না ডেকে গোড়াতেই খবর দেয়া হয় থানার ডোমকে। তারা বৃদ্ধকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে সরকারিভাবে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন।